যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা অথবা সামির আমিনের চোখে ইসলামপন্থা

By Tareq-ul Huda

মানুষের সামনে চিন্তার বিষয় হিসাবে বস্তুর চেহারা বা সুরত যেভাবে হাজির, সেভাবে মর্ম বা সার জানা যাবে না- কান্টের দর্শনের এই মরমী দিককে হেগেল গ্রহন না করে বলেন, কোথায় আলাদা? বস্তুর আকার তো তার মর্মেরই চেহারা। পরম ভাব বিশেষ উপায়ে বা দ্বান্দ্বিক ভাবে এই সুরত বা চেহারা লাভ করে। মার্কস হেগেলের চিন্তাকে  আরো মেরামত করেন, সম্প্রসারিত করে পায়ের উপর সিদা খাড়ায়ে দিয়ে বলেন, পরম ভাব কেন গো সাঁই? এতো মানুষেরি ইন্দ্রিয়পরায়ন কর্মমুখরতা। সেই ইন্দ্রিয়পরায়নতার বিষয়কে মানুষ ধরতে যায়, জেনে বুঝে স্বাদ নিতে চায়। বস্তজগতের মর্ম যেই সুরতে তার সামনে হাজির থাকে, সেই বহিরাঙ্গের গুন ছাড়া মর্ম বা সুরতের কি আর কোন তাৎপর্য থাকতে পারে? এইভাবে খুবই মোটাদাগে আধুনিক দর্শনের যে দিকটি বস্তুবাদ হিসাবে কান্ট- হেগেল-নিউ হেগেলিয়ান্স-মার্কসের চিন্তা পর্যন্ত বিকশিত হয়েছিল আমরা তার নোক্তা রেখে দিতে পারি। তো পশ্চিমের বাস্তবতায় বসে তারা ভেবেই নিলেন, এই যে ইতিহাস জগৎময় খেলাঘরে খেলছে, তা মানুষেরি কর্মময় ইন্দ্রিয়পরায়নতা, যা ইউনিভার্সালকে বস্তুগত সত্যের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য গুন আকারে হাজির করে।

এই সূত্রের কয়েক ভেরিয়েবল বা মানক ইতিহাসে পুঁজি, এনলাইটেনমেন্ট, আধুনিকতা, উপনিবেশিকতা, সম্পত্তি বা উৎপাদন সম্পর্ক, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি বাস্তবতাকে ধারন করে। যেই বাস্তবতায় যেই মানই ধারন করুক না কেন, মার্কসের চিন্তার অনুসারীগন এই ভেরিয়বলগুলিকে নির্দিস্ট সজ্জায় কিছু নির্দিস্ট ছকে সাজিয়ে ইতিহাসের বিচার করেন। তাদের দাবী, এই ছক যে কোন অবস্থায় বা যে কোন বস্তুগত ঐতিহাসিক বাস্তবতায় সিদ্ধ এবং প্রমানিত। এই ছকের একটা বিশেষ দিক মাথায় রেখে আমরা আলোচনার পরবর্তী পর্যায়ে যাবো। মার্কসের চিন্তা অনুযায়ী বিশেষ সময়ে সংস্কৃতি, শিক্ষা, নীতি নৈতিকতা তথা আদর্শ, সেই বিশেষ বাস্তবতার সম্পত্তির রুপ ও সম্পর্ক এবং উৎপাদনের রুপ ও সম্পর্কের  অধীনস্থ। ধর্মের বিচারও তাই আদর্শেরই বিচার, এমনকি সংস্কৃতির বিচারও তাই। তাই ধর্মের বিচার যদি আইন বা অর্থনীতির বিচার না হয়, তবে সেই বিচার খন্ডিত। ধর্মতন্ত্রের বিশ্লেষন যদি রাজনীতির পর্যালোচনা না হয়, তবে সেই বিশ্লেষন বিচ্ছিন্ন। ইশ্বরের সাথে বান্দার সম্পর্ক যদি বান্দার সাথে মানুষের সম্পর্ক না হয়ে উঠতে পারে তাহলে তা মরমী, হাওয়াই। তাই ইতিহাসের মর্ম হলো সম্পত্তি এবং উৎপাদন সম্পর্ক আর তার প্রতিফলন ঘটে আদর্শের সুরতে।

যত বড় মার্কসীয় চিন্তাবিদের উদাহরণই টানি না কেন, তার ভিতরে এই বৈশিস্ট্য থাকবেই। অনেক উদাহরণ ঘেঁটে ক্লান্ত হবার চাইতে, আলোচনার পরিসরের দিকে তাকিয়ে উল্লেখযোগ্য কাউকে মডেল হিসাবে নেয়াই উত্তম। তাই ডাকসাইটে মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক সদ্য প্রয়াত সামির আমীনকেই এবারে বেছে নিলাম। তাত্ত্বিক আলোচনার দিকে না গিয়ে আমিনের চিন্তার মূল সমস্যার দিকটি কাঁচাভাবে ধরার নিমিত্তে কয়েকটি সাক্ষাৎকার এবং বক্তব্য ছেঁকে নিলাম। মজার বিষয় আমাদের দেশের মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকরা ধর্মের আলোচনা করেন মোটামুটি একই ছকে। বলাই বাহুল্য, আমি মার্কসীয় চিন্তার এই ছককে একেবারেই অসাড় না ভাবলেও, তার পদ্ধতিকে ক্ষেত্রবিশেষে ভুল, সমস্যাকীর্ন এবং ফলাফলকে যথেস্ট অসম্পূর্ন মনে করি। ব্যবহারিক রাজনীতিতে একেবারেই এর কোন প্রয়োজনীয়তা নাই, এমনটি অবশ্য ভাবি না।

কপটিক খ্রিস্টান বূর্জোয়া সেক্যুলার চিকিৎসক বাবার ছেলে আমিন ফ্রান্সে পড়াশোনা করেন এবং এনলাইটেন্মেন্ট, ফরাসী বিপ্লব, শ্রেণী সংগ্রাম এবং মার্ক্সের চিন্তাকে আদর্শ আকারে গ্রহন করেন। শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তি এবং আফ্রিকা ও উন্নয়নশীল এশিয়ার মানুষের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ে আজীবন নিজের মেধা মনন নিয়ে হাজির ছিলেন আমিন। নিও-লিবেরাল বৈশ্বিক রাজনীতির পর্যালোচনায় আমিনের নির্ভরতা তত্ত্ব খুবই প্রাসঙ্গিক বিষয় আকারে মার্ক্সীয় রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্রে গ্রহনযোগ্য। আধুনিক সার্বভৌম উৎপাদন ব্যবস্থা এবং এর সাথে স্থানীয় ছোট উৎপাদন প্রক্রিয়ার সম্পর্কের খাতিরে এবং সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপান নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক বৈশ্বিক বাস্তবতায়, মাও পরবর্তী দেংজিয়াও পিঙের রাস্ট্রীয় পুঁজিবাদ পলিসিকে আমিন সমর্থন  করেছিলেন। নিজের ঘরের আলাপে আমিন ইসলামপন্থী রাজনীতি নিয়ে নানা রকমের মতামত দিয়েছেন। উনি ছিলেন নির্বিচারভাবে যে কোন প্রকার ইসলামী রাজনীতির ঘোরতর বিরোধী, যা তার রাজনৈতিক বুঝাবুঝির দিকটা একেবারেই দূর্বল করে ফেলে। এমনটা দাবী করে আমরা এইদিকটায় আলো ফেলার চেস্টা করবো।

মুসলিম ব্রাদারহুড সমর্থিত গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মুরসী সরকারকে রক্তক্ষয়ী নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ভিতর দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করাকে আমিন জোরালো সমর্থন জানান। তিনি এই অসাংবিধানিক সামরিক ক্যুকে মিশরীয় জনগনের অনেক আশার বিজয় বলে গন্য করেন[i]। সামরিক বাহিনীকে জনগনের বন্ধু মনে করে হত্যাকান্ডকে সমর্থনের অন্যতম কারন ছিল, “জনগন”, “মিশরীয়”, “জাতি” ইত্যাদি রাজনৈতিক বর্গকে মিশরের বাস্তবতায় ভূল বুঝা অথবা খন্ডিত অর্থে দেখা। যেই নাগরিকদের ব্যাপক জন সমর্থন মুরসীর পিছনে ছিল, তাদের রাজনৈতিক ধর্মীয় আদর্শের প্রতি হীন ধারনা পোষন করায় নাগরিক হিসাবেই তাদের গোনার মধ্যে ধরেন নাই তিনি। ঘাড়তেড়া আমিন ইসলাম পন্থী রাজনীতিকে ছোট করার জন্যে মোবারক পরবর্তী নির্বাচনকেও বড় কারচুপির ফসল বলেছেন, যা নাকি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও দেখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই কারচুপির সাথে আরেক ভূতুরে কল্পনা করেছেন তিনি। “the five million votes for Morsi came from the most wretched part of the population, devoid of political conscience: the votes of people willing to be bought off for a piece of bread and a glass of milk.”.[ii] বাহ! মুক্তির দূতের বলতে বাধে নাই যে, নিপীড়িত মানুষ রাজনৈতিক চেতনা বিহীন ভেজিটেবল মাত্র, এক টুকরা রুটি আর একটু দুধের বিনিময়ে এরা ভোটও বিকিয়ে দেয়। আর এই জন বিচ্ছিন্ন বুদ্ধিজীবি ভ্যানগার্ডরাই তাবদ চৈতন্যের জিম্মাদার সেজে বসে থাকেন। নির্বাচনে নানা ঘটনা যে ঘটে না, তা নয়। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে মূল ধারা বা বৈশিস্ট্য হিসেবে বিবেচনা করে বাস্তব রাজনৈতিক অবস্থাকে আরাল করার এমন নজির হীন উদ্দেশ্য প্রনোদিত। তবে এই ঘৃনার ফাঁক গলে সত্যটাও বেড়িয়ে আসে, তা হলো কারা তবে ব্রাদারহুডের মূল সমর্থনকারী? কেনই বা প্রান্তিক শ্রেনীর এই সমর্থন ব্রাদারহুডের প্রতি? শ্রেনীবিশারদ আমিন এখানে নীরব কবির ভূমিকা নেন। একই সাক্ষাৎকারে এক বিকট মিথ্যাচার করেছিলেন আমিন, “The Egyptian Muslim Brothers support Israel, like the Gulf countries and Qatar do. They have always adopted an anti-Zionist discourse, but this was just an ongoing deception. The Qatari Emir, for example, is quite used to saying one thing and then doing the opposite, given the complete absence of public opinion.” ।

যে কোন বিচারেই এমন দৃস্টান্ত বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতার লক্ষণ। একটা দিক খুবই পরিষ্কার, তা হলো ঠান্ডা যুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝতে বিশেষ করে ৯/১১ ঘটনা থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের তাৎপর্য বুঝতে বেশীর ভাগ মার্ক্সীয় তাত্ত্বিকরাই উপর্যুপরি ব্যর্থ হয়েছেন। হামাস, তালিবান ইত্যাদি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদদ দেবার অভিযোগে আমিনের জীবদ্দশাতেই ইজরায়েলের ইশারায়, আরব আমীরাতের যুবরাজের পরিকল্পনায়, সৌদী যুবরাজ বিন সালমান জিসিসি জোটের নেতৃত্বে কাতারের উপর অবরোধ আরোপ করেন। আমিন তো তখন কাতার নিয়ে কিছু বলে নাই। কাতারের উপর এই বিরাগের কারন আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না। কাতার রাজ মজলুম মুসলিম ব্রাদারহুড নেতৃবৃন্দকে সিসির কোপানলের হাত থেকে বাচার জন্যে আশ্রয় দিয়েছিলেন, এই তো? আমিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের জায়গাটিও এড়িয়ে যান ইসলাম বিরোধিতার কারনে। শত শত ইসলামপন্থীদের গনহত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, কারাবাস, আইনের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে গন ফাঁসির রায় এসব কিছুই কোন বিষয়ই হয় নাই তার কাছে। এই ঘৃনা এমন উচ্চতায় পৌঁছেছিল যে, মুসলিম ব্রাদারহুড সাম্রাজ্যবাদের পুতুল- একথা উনি বারবার বলে গেছেন। এমনকি সিসির নিপীড়ন আড়াল করার জন্যে তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এই বলে যে, মুরসী পতনের প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনী দেশ মাতৃকার সেবার প্রয়োজনে নিজ স্বার্থ তথা মার্কিন সামরিক সাহায্যের আশা ত্যাগ করে মার্কিন স্বার্থের সরাসরি বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। এই থিসিস প্রমানে তিনি বলেন যে, পট পরিবর্তনের পরে আমেরিকা নিন্দা জানিয়েছে এবং সাহায্য বন্ধ করেছে।[iii] অথচ রাজনীতি বিশ্লেষক এই বুদ্ধিজীবি এও বুঝেন না যে, মার্কিন নিন্দার মূল কারন হলো, পশ্চিমের মানবাধিকার এবং আইনী প্রতিষ্ঠানগুলির নিকট জবাবদিহিতার ধুলা দেওয়া, যেন তারা ক্যুয়ের কারনে মার্কিন প্রশাসনকে দায়ী করতে না পারে। ওবামা প্রশাষন যে এখানে কত সুদুর প্রসারী চিন্তা করেছিলেন তা আরো পরে আমিনের জীবদ্দশাতেই বুঝা যায় । স্বৈরশাসক সিসির সফল আমেরিকা সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিলিয়ন ডলারের সাহায্য ছেড়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিসির অপকর্ম ঠিকঠাক ঢেকে ফেলেন।      

মজার বিষয় হলো, যেখানেই ইসলামপন্থীরা সশস্ত্র উপায়ে অথবা অহিংস উপায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার জায়গা থেকে সফল সেখানেই সেক্যুলার বুদ্ধিজীবিরা একই রকমের কুযুক্তি দেখান। যেমন- এডোয়ার্ড সাইদও মনে করতেন ফিলিস্তিনে পিএলও কে ব্যর্থ করতেই ইজরায়েলের প্রনোদনায় ইজ্জেদিন আল কাসসাম ব্রিগেডের জন্ম। আপনারাও মিলিয়ে নিবেন এমন আরো কুযুক্তি, যেমন- আফগানিস্তানে তালিবানের জন্মই দিয়েছে আমেরিকা অথবা আমাদের বাংলাদেশে হেফাজতের মূল হোতা বিএনপি-আইএসআই। ইসলামপন্থী আন্দোলনের কর্তা সত্ত্বাকে গায়েব করে, শুধু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে বুঝার চেস্টা করা আদতে বুদ্ধিবৃত্তিক অন্তঃসার শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই না। ভাবতে কষ্ট হয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদী পদ্ধতির ইতিহাস বা বস্তু সবই গায়েব করে, নির্বিচারী ধর্ম বিরোধীতার পুঁজিই হলো এধরনের বিশ্লেষণের ভিত্তি। এই পদ্ধতিকে তর্কশাস্ত্রের ভাষায় বলে এড হমিনেম বা যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। দূর্ভাগ্যের বিষয় আমিনের ইসলামপন্থার পর্যালোচনা তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।

সামির আমিন প্রসঙ্গে আরেক মার্ক্সীয় তাত্ত্বিক তারিক আমিন খানের মতামত গুরুত্ত্বপূর্ন। তিনি বলেন, আদর্শ হিসাবে ইসলামপন্থাকে যথেস্ট আন্তরিকতা ও সূক্ষ্মতার সাথে বিশ্লেষন করতে না পারাই মূলত আমিনের এই নির্বিচারবাদীতার কারন। মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে যেখানে ইসলামপন্থা শক্তিশালী এবং বামপন্থীরা দূর্বল, সেখানে আমিনের মতো বক্তব্য প্রদান করলে তা বামপন্থীদের আরো ক্ষতির কারন হতে পারে। ওরিয়েন্টালিস্ট আর পশ্চিমা চিন্তায় যেভাবে ইসলামকে দেখানো হয়, তা থেকে ইসলামপন্থা অনেক আলাদা এবং বামপন্থীদের সমর্থনের সামাজিক জায়গাগুলিতেও তা যথেস্ট প্রভাব বিস্তারে সক্ষম। তাহলে দেখা যাচ্ছে, খান অন্তঃত ৯/১১ পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝতে আন্তরিক। যখন তখন ইসলামকে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্ট ভাবাটা প্রচলিত ঐতিহাসিকভাবে বস্তুবাদের সমস্যা যার মুল ইউরোপ কেন্দ্রিকতা বলেও মনে করেন খান। “A related tendency on the left is to dismiss political Islam as reactionary. This tendency undergirds an uncritical embrace of Enlightenment modernity, and appears to conflate political Islamists with the followers of Islam (Muslims in general)—a conflation that is indeed integral to the dominant narrative in Western societies of “the Muslim” as violent, as oppressor of women, and as a medieval aberration against modernity.”[iv]। এ প্রসঙ্গে তিনি ধর্ম বিদ্বেষী সেক্যুলার রিচার্ড ডকিন্স বা ক্রিস্টফার হিচেন্সের মতো ইতোরচিত বস্তুবাদীদের সাথেও তুলনা করেন আমিনকে। বলে রাখা ভালো, আমিন তার “ইউরোসেন্ট্রিজম” বইতে আদর্শিক বয়ানের ইউরোপ কেন্দ্রিকতার আলোচনা করেন। ঠান্ডা যুদ্ধের শেষ দুই দশক ধরে উত্তর কাঠামোবাদী এবং উত্তর আধুনিকতাবাদীরা মার্ক্সীয় চিন্তার উপর লাগাতার আক্রমন করে যাচ্ছিলেন। এই বইতে আমিন যথেস্ট মুন্সিয়ানার সাথে ইনাদের মোকাবেলা করে মার্কসবাদকে রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন। এখানে মার্কসবাদের উপর এডোয়ার্ড সাঈদের আনীত অভিযোগের জবাব দেবার চেস্টা করেছেন আমিন। সাঈদকে যথেস্ট গ্রহনও করেছেন আমিন। ইউরোপীয় চেতনা, যা কিনা এক বিশেষ “পূর্ব” তৈরি করে, সেই চেতনার বিচার সাঈদের কাছে আমিন গ্রহন করেন। তবে তিনি আরো যোগ করে বলেন, পূর্বের অনেক কিছুর ভিতরেও পশ্চিমের মতোই বিচ্ছিন্ন, প্রতিক্রিয়াশীল সাংস্কৃতিক প্রবনতা রয়ে যায়। আবার এই বিশেষ পশ্চিমা প্রবনতাকে তিনি সাঈদের মতো আলাদাভাবে বিচার না করে, বৈশ্বিক পুঁজির বিকাশের সাথে যুক্ত করে দেখেন, যা কিনা সেই সূত্রের অনুগামী যা প্রথমেই উল্লেখ করেছি। এতকিছু বলেও আমিন আধুনিকতার উপর অনড় থেকেছেন। শুধু আধুনিকতার ইউরোপীয় কেন্দ্রচ্যূত করে, একে খাঁটি ইউনিভার্সাল বা বৈশ্বিক আকারে চেয়েছেন। আধুনিক বা এনলাইটেন্মেন্ট যাই বলি না কেন, নিছকই প্লাস্টিক সার্জারী করে চেহারা পরিবর্তনই মূলত আমিনের ইউরোসেন্ট্রিজমের প্রকল্প। ঠিক এই কারনেই পূর্বের চোখে পশ্চিমা বর্জ্য তথা ধর্মের বিপরীতে প্রগতির ধারনা তার ভিতরে থেকেই যাচ্ছে। কাজেই উত্তর উপনিবেশবাদ পশ্চিমা প্রকল্পের বৈশ্বিকতার বৈধতাকে যে চ্যালেঞ্জ করে, সে সাপেক্ষে আমিন আদতে নতুন কিছু যোগ করতে পারেন নাই। ঠিক এখানেই “ইউরোসেন্ট্রিজমের” মতো কিতাব লিখে ইউরোপীয় মাতুব্বরির বিরোধী আমিনকেই আবার ইসলাম বিরোধিতার ইউরোপীয় প্রজেক্ট নিয়েই, ৯/১১ এর পশ্চিম বনাম প্রাচ্য তথা ইসলামের বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধের হান্টিংটনী প্রজেক্টে সামিল হতে হয়। তাই দিনের শেষে সাম্রাজ্যবাদের খিদমতে আমিনও সামিল হয়ে যান। এই পাটাতনে দাঁড়িয়েই সামির আমিন ইসলাম এবং ইসলামী রাজনীতির সমালোচনায় নানান যুক্তির পসরা সাজিয়ে বসেন।

ইসলাম বিরোধীতার ক্ষেত্রে সামির আমিন এমনি বুঁদ হয়ে যান যে, খেই হারিয়ে আত্ম বিরোধিতা তৈরি করে ফেলেন। যেমন- তিনি দেখান, বামরা মিশরীয় সমাজের মুল দ্বন্দ্বমুখর বাস্তবতায় পৌছূতে পারে নাই, এই ব্যর্থতার কারনেই প্রান্তিক গন মানুষেরা উপায়ন্তর না পেয়ে ইসলামীদের সমর্থন দেন। আবার এই আমিনই বলেন, ইসলাম পন্থীরা মূলত ধর্মীয় আত্মপরিচয় এবং সংস্কৃতি তথা সমাজের উপরি কাঠামো তথা আদর্শিক জায়গায় সক্রিয়, যা কিনা সব কিছুকে শুধুমাত্র ধর্মীয় বর্গে সীমাবদ্ধ করে ফেলে এবং মুল সমস্যাকীর্ন স্তরে তারা অনুপস্থিত। নিজের চিন্তা পদ্ধতি ব্যবহারে আমিনের এই দোদূল্যমানতা তার তাত্ত্বিক দূর্বলতাই প্রমান করে। আগেই বলেছি, “চেতনাহীন” জনগনের ভোট বিক্রি ইসলামপন্থীদের জয়ের কারন বলেছেন তিনি, যার সাথে এই পর্যায়ের আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লেখিত সামাজিক সংগ্রামের বাস্তব স্তরে ইসলাম্পন্থীদের জনগন সম্পৃক্ততার দিক একেবারেই বিপরীত। একটি প্রতিক্রিয়াশীলতা, অপরটি বৈপ্লবিক।[v] অন্যদিকে প্রান্তিক শ্রেনীর সমর্থন এবং সেই সামাজিক স্তরে ইসলামপন্থীরা সক্রিয় থাকলেও তিনি তাদের সাথে রাজনৈতিক মিত্রতা গড়ে তুলতে সমাজতন্ত্রীদের বারন করেন। এই লক্ষণ প্রচন্ডভাবে প্রতি-বিপ্লবী। সমাজতন্ত্রীদের সতর্ক করার পিছনে তার যুক্তি হলো, এর পরিনতি ইরানের মতো হতে পারে। অথচ তিনি মার্ক্সিস্ট হয়েও ভুলে যান বলশেভিকরা কিভাবে ইসলামপন্থীদের সাথে জার বিরোধী আন্দোলন করেছিল এবং জারের পতনের পরে জাতীয় সমঝোতার প্রশ্নে দাগেস্তান, ইঙ্গুশেঠিয়া, চেচনিয়াকে রাজনৈতিক, রাস্ট্রীয়, এমনকি আইনী অনেক ছাড় দিয়েছিল। ইসলাম ও ইসলামীদের প্রতি এক রকম বিকারগ্রস্থ বিরোধীতার কারনে সামির আমিনের পক্ষে শ্রেনী সংগ্রামের ভিত্তিতে বলশেভিকদের মতোন কোন রাজনৈতিক সম্ভাবনার কল্পনা করা সম্ভব হয়ে উঠে নাই। এটাই আমিনের সব চাইতে বড় আত্মবিরোধীতা। তাই আমিনের ভাষাতেই বলতে হচ্ছে যে, ইসলামপন্থার বিষয়ে আমিনের অবস্থান নিছকই “কালচারাল”।  

সামির আমিনের চিন্তার কাঠামো খুবই সরল, উপাদানগুলি একদম সহজেই আন্দাজ করা যায়। বাস্তবের আমিন এই আন্দাজের চেয়ে খুব বেশী পার্থক্য বজায় রাখতে পারেন না। সম্মোহিত করতে পারেন, এমন সৃস্টিশীল ক্ষমতা  আমিনের মোটেও নাই। যেমন- যে কেউ আগেই বুঝতে পারেন আমিনের চিন্তার অন্যতম কাঠামোগত উপাদান সেক্যুলারিজম। আমিন নিজেকে র‍্যাডিকাল সেক্যুলার বলেন। তাই ইতিহাসে তিনি মিশরের মুহম্মদ আলী, ইসমাইল পাশা, তুরস্কের কামাল, ইরানের শাহকে আধুনিকতার স্থপতি হিসাবে গুরুত্ত্বের সাথে বিবেচনা করেন। এরা সবাই নিজ বাস্তবতায় পশ্চিমা ধাঁচের পুনর্জাগরনে সচেষ্ট ছিলেন। যার মুল লক্ষ্য ছিল ধর্মের রাজনৈতিক প্রভাব সীমাবদ্ধ স্তিমিত করে ফেলা। ক্ষেত্র বিশেষে ধর্মকে দমন করা, যা আমরা কামালের ভিতর দেখি। মজার বিষয় আমিন এসকল ক্ষমতাধরদেরকে “enlightened despotism” বলে সদর্থকভাবে অভিহিত করেছেন। এদের পরবর্তী ক্ষমতাধর প্রজন্মের গনতন্ত্রহীন আরব জাতীয়তাবাদী স্বৈরতান্ত্রিক মডেলকেও তিনি সমস্যা মনে করেন নাই।  আমিনের ভাষায়, “All these regimes accomplished much and, for this reason, had very wide popular support. This is why, even though they were not truly democratic, they opened the way to a possible development in this direction.” কিন্তু অপরদিকে ধার্মিক মানুষদেরকেই মুল মুসিবত ভেবেছেন, “Secularism, implemented in moderate versions, to be sure, was not “refused” by the people. On the contrary, it was religious people who were regarded as obscurantists by general public opinion, and most of them were.”

আমরা আবার তারিক আমিন খানের আলাপে ফেরত যাবো ইসলামফোবিয়া প্রসঙ্গে। খান দেখিয়েছেন, ইসলামভীতির মুল কারনকে আড়াল করে, ক্ষতিগ্রস্থকেই অর্থাৎ মুসলিমদেরকেই অভিযুক্ত করেছেন আমিন। পশ্চিম বিরোধিতার ক্ষেত্রে বারাবাড়িই নাকি ইসলামফোবিয়ার কারন। অথচ মুল কারন ইউরোপ কেন্দ্রিক রাজনৈতিক বর্নবাদী মানসিকতার কোন পাঠ ইতিহাস থেকে আমিন নিতে পারেন নাই, বুঝেন নাই জাত্যাহঙ্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি। আমিনের ইতিহাস পাঠের ব্যর্থতার আরেক গুরুত্ত্বপূর্ন নজির হলো ইসলামপন্থী রাজনীতিকে উনি পাঠ করেন উপনিবেশ উত্তর কাল থেকে। ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সক্রিয়তার অন্যতম পর্ব যে উপনিবেশকাল, তা উনার  কর্মযজ্ঞের বিষয় থেকে প্রায় অনুপস্থিত। উপনিবেশকালে ইসলামপন্থীরা যেভাবে সাম্রাজ্যবাদকে মোকাবেলা করেছিল তার হদিস  আমিনের বয়ানে পাওয়া না গেলেও, তিনি বলতে ছাড়েন না ইসলামপন্থা সাম্রাজ্যবাদেরই সেবক।

আমরা এ প্রসঙ্গে আরো অনেক উপাদান সামির আমিনের বক্তব্য থেকে বের করতে পারি। তবে মার্ক্সীয় চিন্তার ইতিহাসে এর বিপরীতে আরো শক্তিশালী যেই উদাহরনগুলি আছে, তার কিছুটা বুঝ আমিনের বক্তব্য পর্যালোচনার জন্যেই জরুরী। আমরা ফ্রেদরিখ এঞ্জেলসের নাম নিতে পারি, যিনি শ্রেনী সংগ্রামও যে ধর্মীয় মোড়কে হতে পারে এমন বিশ্লেষন করেছিলেন অনেক আগেই। আদি ঈসায়ী ধর্মের ইতিহাস নামের এক রচনায় তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও চিত্তাকর্ষক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, “ A peculiar antithesis to this was the religious risings in the Mohammedan world, particularly in Africa. Islam is a religion adapted to Orientals, especially Arabs, i.e., on one hand to townsmen engaged in trade and industry, on the other to nomadic Bedouins. Therein lies, however, the embryo of a periodically recurring collision. The townspeople grow rich, luxurious and lax in the observation of the "law." The Bedouins, poor and hence of strict morals, contemplate with envy and covetousness these riches and pleasures. Then they unite under a prophet, a Mahdi, to chastise the apostates and restore the observation of the ritual and the true faith and to appropriate in recompense the treasures of the renegades. In a hundred years they are naturally in the same position as the renegades were: a new purge of the faith is required, a new Mahdi arises and the game starts again from the beginning. That is what happened from the conquest campaigns of the African Almoravids and Almohads in Spain to the last Mahdi of Khartoum who so successfully thwarted the English. It happened in the same way or similarly with the risings in Persia and other Mohammedan countries. All these movements are clothed in religion but they have their source in economic causes; and yet, even when they are victorious, they allow the old economic conditions to persist untouched. So the old situation remains unchanged and the collision recurs periodically. In the popular risings of the Christian West, on the contrary, the religious disguise is only a flag and a mask for attacks on an economic order which is becoming antiquated. This is finally overthrown, a new one arises and the world progresses.”[vi]। এঙ্গেলসের জর্মানীর কৃষক বিদ্রোহে ব্যবহৃত শ্রেনী সংগ্রামের মডেলটি খুব সার্থক ভাবে আফগান যুদ্ধে তালিবানের প্রতিরোধ আন্দোলন প্রশ্নে প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন এশিয়ার অন্যতম সৃস্টিশীল এবং বাংলাদেশের সেক্যুলার বুদ্ধিজীবিদের ভিতর সন্দেহাতীতভাবে সব চাইতে গুরুত্ত্বপূর্ন মার্ক্সীয়ান তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার। রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে তাকালে আমরা দেখি বলশেভিকরা যে পদ্ধতিতে ইসলাম এবং মুসলিম জনগনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন, সামির আমিন সম্পূর্ন উল্টা রাস্তা ধরেছেন।

কাকতালীয় ঘটনা হলো, ঠিক ১০১ বছর আগের এই দিনে, অর্থাৎ ১৯১৭ সালের ২৪ নভেম্বর, বিপ্লবী সোভিয়েট সরকার মুসলিম শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয় যে, “Muslims of Russia ... all you whose mosques and prayer houses have been destroyed, whose beliefs and customs have been trampled upon by the tsars and oppressors of Russia: your beliefs and practices, your national and cultural institutions are forever free and inviolate. Know that your rights, like those of all the peoples of Russia, are under the mighty protection of the revolution ...”।[vii] জারের বিরুদ্ধে রাশান উপনিবেশের মুসলিমরা সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং বলশেভিকদের সাথে এই উদ্দেশ্যে তাদের মিত্রতা হয়েছিল। জারের পতনের পরে বিপ্লবী সোভিয়েট সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বিগত উপনিবেশের মুসলিমরা যেন সর্বোচ্চ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে। এমনকি তারা শারিয়া আইনও প্রশ্রয় দিয়েছিল মুসলিম প্রধান মধ্য এশিয়া এবং ককেশাসে। সোভিয়েট কেন্দ্রের আইন এবং শারিয়া পাশাপাশি চলতো। এমনকি কম বয়সে বিবাহ এবং বহু বিবাহ ককেশাসের জন্যে অনূমোদিত ছিল। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নে এই অবস্থা ক্ষণস্থায়ী ছিল, তারপরেও তা ঐতিহাসিক বিবেচনার বিষয় না হবার কোন কারন নাই। আমিনের মতো প্রগতি এবং সেক্যুলার ইউনিভার্সালিজম এখানে ধর্মীয় বৈচিত্র্যময় অনন্যতা এবং ভিন্নতাকে গ্রাস করে নেয় নাই, যদিও বলশেভিক এবং সামির আমিনের তাত্ত্বিক গোড়া প্রায় একই। সিনথেটিক সংজ্ঞায়ন আরোপ করে ধর্মকে তাত্ত্বিক কাঠামোর ভিতরে অক্ষম, প্রতিক্রিয়াশীল, অপরিণত, অবলা, অসম্পূর্ন অভিধা দিয়ে, রাজনৈতিকভাবে বর্জন করার নীতি বলশেভিকরা নেয় নাই। বরং আমিন যা করতে পারেন নাই, পারবেন না, তা অনেক আগেই করে দেখিয়েছিলেন বলশেভিকরা। তা হলো, তাত্ত্বিক বা ভাবগত তাৎপর্য ধরতে না পারলেও মুসলিমদের রাজনৈতিক সংগ্রামের মর্যাদা প্রদান। মজার বিষয়, বলশেভিকদের ঠিক পরেই রাশিয়ান আভিজাত্যবাদী আরেক কম্যুনিস্ট নিপীড়ক স্ট্যালিনের সময় ঠিক উল্টা ঘটনা ঘটতে শুরু করেছিল। বলতে অসুবিধা নাই, ইসলামপন্থার প্রশ্নে আমিন স্ট্যালিনীয় পদ্ধতির অনুসারী। এখান থেকে আরেকটি শিক্ষা হলো, রাজনৈতিক মিত্রতার ক্ষেত্রে আদর্শিক তাত্ত্বিক মডেলের চাইতে, ব্যবহারিক বাস্তব চাহিদা ভিত্তিক রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও কৌশল অনেক বেশী ফলপ্রসূ এবং মঙ্গলজনক।     

এমন গোঁওয়ার গোবিন্দের মতে ইসলাম বিরোধিতা মুল ভিত্তি হলো র‍্যাডিকাল সেক্যুলারিজম। তারিক আমিন খানের সমালোচনার জবাবে সামির আমিন তার পুরানো অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করে এ প্রসঙ্গে তাৎপর্যময় কথা বলেছিলেন, “radical secularism is the condition for implementing a creative democracy, one which does not justify its progress by an interpretation from the past, religious or otherwise, which always acts as a conservative obstacle.”[viii] তাহলে এই বিপ্লবী ধর্মনিরপেক্ষতা এমন এক অপার্থিব বিচ্ছিন্ন চীজ আর কোথায় না হোক, অন্তঃত আমিনের মাথায় আছে, যার সাথে অতীত, ইতিহাস বা ধর্ম কোন কিছুরই সম্পর্ক নাই। এ এমনই এক আদর্শ যার কাছে অন্য সকল আদর্শই বাধা। কাজেই বাধা যে কোন উপায়ে দূর করাই হলো র‍্যাডিকাল সেক্যুলারিজমের রাজনীতি। আমিন নিয়ে এতক্ষন এত কথা বলা হলো শুধু এই জায়গায় আসতে যে, বাংলাদেশেও এই হাওয়াই, বিচ্ছিন্ন, আরোপিত ধর্ম বিনাশী সেক্যুলারিজমের প্রতিধ্বনি দেখা যাচ্ছে। বাংলার ইতিহাস, উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রাম, ৪৭ থেকে ৭১- পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতা , সেখান থেকে শাপলা, এই পর্যন্ত বহমান ইতিহাস বিচ্ছিন্ন হয়ে হঠাৎ শাহাবাগ নামক র‍্যাডিকাল সেক্যুলার চেতনার উদ্ভব হয়েছিল। আমিনীয় বয়ানের প্রায় সকল যুক্তিই এর ভিতর খুঁজে পাওয়া যাবে। এই চেতনার কাছে ইসলামপন্থা মানেই হয় রাজাকারী অথবা “conservative obstacle”। আশা করবো বামপন্থীদের ভিতর প্রকৃত বলশেভিকপন্থী অথবা তাদের আদর্শ মনে করে থাকেন, এমন কেউ যদি এখনো থেকে থাকেন, তবে তাদের নিজের ভবিষ্যত বাঁচাতে হলেও এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত হবার সংগ্রাম জারী রাখবেন। সেখানে হয়তো ইসলামপন্থিদের সহযোগিতা না পাবার কোন কারন থাকবে না।     

 

                        

তথ্যের উৎসঃ

[i] https://www.pambazuka.org/security-icts/important-victory-egyptian-people

[ii] https://www.premiumtimesng.com/opinion/140519-morsi-and-the-aborted-theocracy-in-egypt-by-samir-amin.html

[iii] https://www.legrandsoir.info/samir-amin-la-chute-de-morsi-doit-etre-consideree-comme-une-victoire-du-peuple.html

[iv] https://monthlyreview.org/commentary/analyzing-political-islam/?fbclid=IwAR12WlR-XH1yA9FxjWBa5sLa_B5keotWghFQob92LC4gATrVfZ2b0QPDyFo

[v] https://monthlyreview.org/2007/12/01/political-islam-in-the-service-of-imperialism/

[vi] https://www.marxists.org/archive/marx/works/1894/early-christianity/index.htm?fbclid=IwAR0Dlv2U35NW1a-hDuVOa-Ix_PVfCfjQQrx6oKQryCsDNKyBq7Ay8p20Aao

[vii] https://www.marxists.org/history/etol/newspape/isj2/2006/isj2-110/crouch.html

[viii] https://monthlyreview.org/commentary/comments-on-tariq-amin-khans-text/?fbclid=IwAR1gouVBkcSClxpFNMjUeMYT5OgHD00ce6rubxrBAvC8AI3QJ0405XgKqU0