Shapla: 10 Year Anniversary

ঈসায়ী ২০১৩ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বাংলাদেশের ইতিহাসে্ এক মাইল ফলক। এর আগে থেকেই স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি বলে কথিত বাঙ্গালী জাতিবাদী লিঞ্ছিং মবরা লাগাতার চলতে থাকা শাহাবাগ আন্দোলনে মব জাস্টিস কায়েম করে ফেলে। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লাকে প্রহসনের বিচারে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার পরেও মন ভরে নাই রক্তপিপাসু এই শাহাবাগী হায়েনার দলের। তারা দল বেঁধে রাস্তায় নেমে জনজীবন পর্যুদস্ত করে ফেলে। সাধারন মানুষকে জিম্মি বানিয়ে তথাকথিত যুদ্ধপরাধীর ফাঁসী চাইতে থাকে। মার্কিন দেশেও রক্তপিপাসু বর্নবাদী সাদা লিঞ্ছিং মবরাও দল বেঁধে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির ভিতর দিয়ে অভিযুক্ত কালোকে ন্যায্য সুবিচারের সকল সুযোগ বঞ্চিত করে, ঘৃনা ছড়ানোর ভিতর দিয়ে জনসমক্ষে হত্যা করতো।

শাহাবাগের জনমত কাজে লাগিয়ে সরকার নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে ফেলে ভারতীয় স্বার্থের অনুকুলে আধিপত্য এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ইসলামী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নির্মূল করে। একে একে ফাঁসীর আদেশ হয় আরো জাতীয় ইসলামী নেতৃত্ববৃন্দের। এই বৈচারিক হতাকান্ডের সম্মতি প্রক্রিয়ায় শরিক হয়ে নাম করা সেক্যুলার প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবি, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকরা জনগনের এক বিশেষ অংশকে লেলিয়ে দেয় ইসলাম পছন্দ জনগনের অপর অংশের বিরুদ্ধে। রক্ত পিপাসু উন্মত্ত শাহাবাগীরা এর পরে ইসলামী সর্বোচ্চ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মহানবী মুহম্মদ (সঃ) এর সুউচ্চ শান ও মর্যাদা নিয়ে মিথ্যাচার, কটুক্তি শুরু করে। যেই শাহাবাগীরা ইসলামী রাজনীতি নির্মূলের মিশন নিয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছিল, তাদের কূকর্ম একের পর এক জনসমক্ষে আসতে থাকে।                    

আলেম ওলামা, তালিবুল ইল্‌ম, সাধারন মুসলিমেরা এমতাবস্থায় নিজেদের কর্তব্য কর্ম পরিকল্পনা স্থির করে, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে সারাদেশ অচল করে দেন। ৫ মে তে, জনগনের প্রানের দাবী ১৩ দফা নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করেন লক্ষ লক্ষ আলেম, তালিবুল ইলম, সাধারন মুসলিম জনগন।  এইবার সকল পর্দা ছিড়ে সরাসরি সামনে আসে সরকারী সশস্ত্র পেটোয়া বাহিনী পুলিশ, র‍্যাব, বিজেবি। রাতে লাইট নিভায়ে, চলমান লাইভ মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে শুরু হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। শহীদ হন অসংখ্য নিরপরাধ আলেম, সাধারন মুসলিম। এই হত্যাযজ্ঞ গনহত্যা না, এরা রঙ মেখে রাস্তায় শুয়ে ছিল, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে হতাহতের সংখ্যা ম্যানিপুলেট করা হচ্ছে, ইত্যাদি নানা কিছু বলে সেই সময়ে বাস্তব অবস্থা গোপন করার চেস্টা চালায় সেক্যুলার বুদ্ধিজীবিরা।

দশ বছর পার হলেও শাপলা হত্যাযজ্ঞের কোন বিচার হয় নাই।  হয় নাই ১৩ দফার কোন মূল্যায়ন, বিচারের নামে প্রহসনের কোন তদন্ত। রক্তের সওদাগর সেই সেক্যুলারেরা এখনো ভদ্রলোকের মুখোষ নিয়ে জাতির বিবেকের ভূমিকায় দোর্দন্ত প্রতাপে অভিনয় করছেন। বেওয়ারিশ লাশের মতোন শাপলা পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসও গন্তব্যবিহীন পথে লাপাত্তা হলো। কোন মীমাংসা হলো না এই দ্বন্দ্বের, যা শুরু হয়েছিলো সেই ১৯৭১ এ?

মূলতঃ এই দূরাবস্থার দায় বাংলাদেশের সেক্যুলার রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিজীবিদের। তাদের সমস্যা প্রকট হয়ে ধরা পরে শাহাবাগ-শাপলা দ্বৈরথে। যেই ভালগার পজিটিভিস্ট সেক্যুলার চিন্তা ইউরোপে এনলাইটেন্মেন্টের সময় প্রাসঙ্গিক ছিল, তা এখনো উন্মত্ত ক্ষমতাসীনদের ধামাধরা বুদ্ধিজীবিরা চর্চা করছে। সেক্যুলার মহলে হয় ফরাসী-ইংরেজ উপনিবেশী জাতিরাস্ট্রভিত্তিক অথবা মার্কিন ভিত্তিক রিপাব্লিকান চিন্তার প্রাবল্য লক্ষ্য করা যায়। আরেকদল প্রগতিশীল বাম সেক্যুলারেরা বৈশ্বিক ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তির পরে দেশে এবং বিদেশে পরাজয় বরন করলেও ক্ষমতাসীন রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করার চেস্টায় রত। মূলত এই শ্রেনীগুলির চূড়ান্ত বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা, ইতিহাস অসচেতনতা, গন বিচ্ছিন্নতা, দায়হীনতা, উধ্যত আচরন, নিয়ন্ত্রন, ম্যানিপুলেশন, নির্বিচারী ধর্ম-বিদ্বেষী মনোভাবই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্যে দায়ী। মার্ক্সীয় ধর্ম বিশ্লেষন বা পর্যালোচনার ঐতিহাসিক বস্তুবাদী পদ্ধতি ইনাদের কাছে ইমান-আকিদার মতোই অনুসরনীয়। তারা স্থবির-নিশ্চল-নিথর হয়ে বসে জাতীয় সমাজতন্ত্র, সেক্যুলার রিপাব্লিকের খোয়াব দেখছেন, মুসলিমদের লাশের স্তূপের উপর। তাদের পূর্বানুমান হলো, বাংলাদেশে ধর্মের পর্যালোচনা শেষ। ইসলামী রাজনীতি মাত্রই সাম্প্রদায়িক বা কম্যুনাল। ধর্মীয় রাজনীতি মাত্রই অসম্পূর্ন, খন্ডিত। আইডেন্টিটি পলিটিক্স বা নির্দিস্ট ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মাত্রই মধ্যযূগীয়, প্রগতির অন্তরায়। 

আমরা পর্যায়ক্রমে শাপলা নব জাগরনের দশ বছর সামনে রেখে বাংলাদেশের জাতীয় সত্তার নানা দিক উন্মোচন করবো ইনশাআল্লাহ্‌। শাপলায় সক্রিয় তৌহিদী জনতার কর্তা সত্ত্বা, হেফাজতে ইসলামের ইতিহাস, শাহাবাগী বুদ্ধিজীবিদের পর্যালোচনা থেকে শুরু করে নানা দিক থেকে বিশ্লেষন, আলোচনা থাকবে। আপনাদের সক্রিয়তা কাম্য। আল্লাহ তৌফিক দিন।