উপনিবেশ বিরোধী ইসলামপন্থা : হামাসের প্রতিরোধ ও ফিলিস্তিনের আজাদির লড়াই

By Adnan Khalid, Ashraf Ali, Ishtiak Arham

 

قُلِ اللّٰهُمَّ مٰلِکَ الۡمُلۡکِ تُؤۡتِی الۡمُلۡکَ مَنۡ تَشَآءُ وَ تَنۡزِعُ الۡمُلۡکَ مِمَّنۡ تَشَآءُ ۫ وَ تُعِزُّ مَنۡ تَشَآءُ وَ تُذِلُّ مَنۡ تَشَآءُ ؕ بِیَدِکَ الۡخَیۡرُ ؕ اِنَّکَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ

سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِهٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَهٗ لِنُرِیَهٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ

وَ مَا لَکُمۡ لَا تُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الرِّجَالِ وَ النِّسَآءِ وَ الۡوِلۡدَانِ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَاۤ اَخۡرِجۡنَا مِنۡ هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃِ الظَّالِمِ اَهۡلُهَا ۚ وَ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ

لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۚۙ وَّ اجۡعَلۡ لَّنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ نَصِیۡرًا

 

Narrated by Imam Ahl al-Sunna Ahmad Ibn Hanbal (RH) in al-Awsaṭ from the companion Abu Umama al-Bahili (RA), the final Prophet (SAWS) says, “A group of my Umma remains prevalently committed to the truth: defeating their enemy, not harmed by those who disagree with them, nor those who let them down, nor the adversity that befalls them, until Allah’s will and support comes to them while they are in that situation. They said: O Messenger of Allah, where are they? He said: In Bayt al-Maqdis and the vicinity of Bayt al-Maqdis.”

“We are all in sacrifice for Quds, death is beautiful for the sake of Quds. Yes, wallah, alhamdulillah, and if all my children died for the sake of Quds it won’t be a problem for me. This is Quds, not something easy. It’s not a house, a house can be replaced. But Quds is the place where the Prophet (SAWS) came on a journey to it, from where can [we] replace it? We Palestinians are always like this [...] And, if there comes a hundred million wars, it will not break our determination or will. We will continue to stand firm and this land is ours and still the price of what we face is nothing, and we are ready to pay more! Alhamdulillahi rabbil-alamin.” - a Palestinian mother

"ফালাস্তিন আওলা মিন আফগানিস্তান"

    - শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ:)

"হামাস একটি রাজনৈতিক শক্তি। এরা সকলে মুজাহিদ, ইসলামের পবিত্র জিহাদে রত৷ "

   - শাইখুল ইসলাম, মুফতি তাকি উসমানি (হাফি: 

The settler's work is to make even dreams of liberty impossible for the native. The native's work is to imagine all possible methods for destroying the settler. On the logical plane, the Manicheism of the settler produces a Manicheism of the native. To the theory of the "absolute evil of the native" the theory of the "absolute evil of the settler'' replies.

— Frantz Fanon, The Wretched of the Earth

"There has been an anticolonial component of political Islam reflected in the movements in colonial India and colonial Algeria."

- Tariq Amin Khan, Analyzing Political Islam: A Critique of Traditional Historical Materialist Analytic.

০৭ ই অক্টোবর, উপনিবেশ-দখলদারিত্ব বিরোধী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম বিগ্রেড আল-আকসা ফ্লাড পরিচালনা করে৷ হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম বিগ্রেডের এই আল-আকসা ফ্লাড নিয়ে শুরু হয় নানা বাতচিত-বাহাস-পর্যালোচনা৷ নানা মুনির নানা মতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু মত এমন যে, এটা ইসরাইলের ৯/১১, বে-সামরিক মানুষ হত্যা, যুদ্ধবন্দীর অভিযোগে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে অশ্রু ঝরা শোকগাঁথা৷ দিন কয়েক বাদে যখন উপনিবেশী-দখলদারি রাষ্ট্র ইসরাইল গাযায় হাসপাতাল, ক্যাম্প সহ নানা বে-সামরিক স্থাপনায় হামলা করে গনহত্যা করল তখন সেই বাহাসকারী পর্যালোচকদের একটা অংশ 'সন্ত্রাস ' দমন নীতির জিগির তুললো, আরেক অংশ বিশ্ব মানবতার দোহাই দিয়ে হামাস-ইসরাইল মুদ্রার এপিট-ওপিট বলে বয়ান উৎপাদন করল৷ এই উৎপাদিত বয়ান ইউরোপীয় উদারনীতিবাদী-মার্ক্সিস্টদের। স্লাভয় জিজেক জর্মন দেশের বইমেলায় বা হেবারমাস মশাই তার বয়ানে একই সুর পুনঃ উৎপাদন করেছে৷ ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টদের তুলনায় অ-ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টরা আল কাসসাম বিগ্রেডের আল আকসা ফ্লাডকে আরেকটু সাবালকত্বের সাথে বোঝাপড়ার চেষ্টা করছে৷ ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টদের ন্যায় অ-ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টরা ২য় বিশ্বযুদ্ধের ইহুদি গনহত্যার ট্রমায় স্তব্ধ হয়ে যায় নাই৷ কিছুটা নড়ে-চড়ে বসতে পারছে৷ এই নড়ন- চড়নের শানে নুযূল তাদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনের অভিজ্ঞতা-প্রতিরোধ সংগ্রাম। অ-ইউরোপীয় উদারনীতিবাদি-মার্ক্সিস্টদের বয়ানে ৭ই অক্টোবরের আল-আকসা ফ্লাড ও ইসরাইলের নগ্ন গনহত্যাকে মার্ক্সীয় ইতিহাস বিচারের ছকে শুধুই জালেম-মজলুম বা জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম হিসাবে শনাক্ত করছে৷ এই শনাক্তি যে আধা সত্য তা গুমের সাথেও অ-ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টদের রিশতা আছে৷ ফিলিস্তিন-মিশর হতে বাংলাদেশের মার্ক্সিস্টরা কিভাবে ফিলিস্তিনের আজাদির লড়াইয়ে ইসলাম,  মুসলিম কর্তাসত্তার রাজনৈতিকতা, তার জেহাদি তামান্না , ইসলামপন্থা বিশেষত হামাসকে গুম বা আরোপিত উপেক্ষা, মতাদর্শিক রাজনীতি করে তার ই সুলুকসন্ধান করব উক্ত নিবন্ধে। উক্ত নিবন্ধ উপনিবেশ বিরোধী ইসলামপন্থার কুলুজির হদিস করে, উক্ত কুলুজির সাথে হামাসের ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক-আধ্যাত্মিক ও মতাদর্শিক সম্পর্ক বিচার, চলমান জেহাদ-প্রতিরোধ সংগ্রামের মর্মের তলব করে, ইসলামপন্থা বিয়োজনের মতাদর্শিক রাজনীতি চিহ্নিত করে  ফিলিস্তিনের আজাদির লড়াইয়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব করে৷   

১. উপনিবেশ বিরোধী ইসলামপন্থার সুলুকসন্ধান : মুসলিম রাজনৈতিক সত্তা ও প্রতিরোধ সংগ্রাম

 উপনিবেশবাদ মুসলিম জাহানের জন্য ছিল প্যারাডাইম শিফট। নয়া প্যারাডাইম প্রাক উপনিবেশি যামানার বিদ্যমান ব্যবস্থাকে উল্টে দিয়েছিল৷ ঔপনিবেশিক যামানায় বিশেষত মুসলিম ভূখন্ড গুলোতে এই প্যারাডাইম শিফট ভূখন্ডে বসবাস রত মুসলিম সহ অন্যান্যদের জীবনে বিশেষ প্রভাব রাখে৷ আইন, ভূমি ব্যবস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে নানা জায়গায় প্রাক উপনিবেশি ব্যবস্থা ভেঙে ঔপনিবেশিক  কাঠামো প্রতিষ্ঠা পায়৷ আফ্রিকা থেকে শুরু করে হিন্দুস্তানে ইউরোপীয় উপনিবেশি শক্তির মহিমা প্রতিষ্ঠ হয়। ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ - প্রতিরোধ - জিহাদ শুরু হয়৷ উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে ওলামা - সুফি থেকে শুরু করে ইসলাম অনুপ্রাণিত যুবক মুজাহিদ অবধি জিহাদ- প্রতিরোধ গড়ে তুলে দুনিয়ার নানা ভূখন্ডে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে । আলজেরিয়া থেকে মরক্কো, লিবিয়া থেকে ফিলিস্তিন, আফগান থেকে হিন্দুস্তান - বাংলা - আরাকানে স্থানীয় মুসলিম - ওলামা - সুফি- দরবেশ - ফকিরদের সংগ্রাম- প্রতিরোধ - জিহাদ ঔপনিবেশিক শাসনকে কাপিয়ে তুলে৷ উপনিবেশি শক্তির এই কম্পন হেগেলের সেই মনিবের মতোন। গোলামের ছুটে চলা মনিবের মাঝে ত্রাস তৈরি। ত্রাস কলেরার মতো ছড়িয়ে পড়ে৷ মনিবকে হটিয়ে নয়া সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করে গোলাম৷ গোলামের নয়া সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের মাধ্যমে মনিবকে হটিয়ে গোলাম কর্তা হিসাবে হাজির হয় দৃশ্যপটে৷

মশহুর মিশরীয় মার্ক্সিস্ট সামির আমিনের বেশ চর্চিত প্রবন্ধ " ইসলামপন্থা সাম্রাজ্যবাদের সেবক " পাঠক মহলে সমাদৃত৷ সামির আমিনের মিশরে প্রতিষ্ঠা পায় ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিম৷ ইসলামপন্থা নিয়ে সামির আমিনের নির্বিচারবাদি  আরোপিত অভিযোগের পর্যালোচনা হাজির করেন পাকিস্তানি মার্ক্সিস্ট তারিক আমিন খান। তারিক আমিন দেখান ঔপনিবেশিক আলজেরিয়া - ভারতে ইসলামপন্থার জেহাদি প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস।ফারাহ আল শারিফ দেখান, ঔপনিবেশিক যামানায় কিভাবে সুফি-দরবেশরা উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে ছিলেন৷ লিবিয়ার কাদেরিয়া - সানুসি আন্দোলন থেকে শুরু করে আলজেরিয়া, মরক্কো, তাঞ্জিনিয়া সহ আফ্রিকা অঞ্চলে সূফিদের প্রতিরোধ - জেহাদ তুলে ধরেন। ফারাহ একইসাথে হিন্দুস্তানের মাওলানা ফজলে হক খয়রাবাদী সহ সালাফি ধারার উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ - জেহাদ হাজির করেন তার The Saint and the Sword: How Sufi Scholars of the Nineteenth Century Resisted Colonialism and State Repression আর্টিকেলে৷ আহমাদ বিন কাশিমের পডকাস্টে ফারাহ আল কাসসামের উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রাম - জেহাদ হাজির করেন, যার নাম অনুসারে উপনিবেশ বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার নামকরন করা হয়৷ আল কাসসাম, গ্রান্ড মুফতি আমিন আল  হোসাইনি, ওমর আল মুখতার, ফজলে হক খয়রাবাদি সহ আফ্রিকা - এশীয় উলেমা - ইসলামপন্থী - ইসলাম অনুপ্রাণিত মুজাহিদীনদের উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামের সোনালি ইতিহাস অজানা নয়৷

আসলে ইসলামপন্থা কি?  ইসলামপন্থা (Islamism) হলো এমন এক আধুনিক ঘটনা ( modern phenomenon) যা খিলাফত উত্তর দুনিয়ায় আধুনিক রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে ইসলামের রাজনৈতিক-সামাজিক- সাংস্কৃতিক - বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আচরণিক কর্তৃত্বে হাজির করবার  প্রচেষ্টা মাত্র ৷  খিলাফতকালীন ইসলামপন্থা (Islamism) ছিল না,  কিন্তু ইসলাম রাজনৈতিক - সামাজিক - সাংস্কৃতিক পরিসরে হাজির ছিল অর্থাৎ ইসলাম ছিল  (natural order of things) বা সালমান স্যায়িদের ভাষা ধার করলে (Master Signifier)। খিলাফত উত্তর নব্য তুরস্ক ইসলামকে তার Natural order of things বা Master Signifier

হতে আইনি ক্ষমতা বলে রহিত করে৷ ইসলামপন্থা সেই কামালবাদী সেক্যুলার ক্ষমতার প্রশমন করে, ইসলামকে Master Signifier হিসাবে পুনঃরায় হাজির করবার প্রয়াস। ইসলামপন্থা উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রামে যেরকম লড়াই- সংগ্রাম - প্রতিরোধ - জেহাদ গড়ে তুলে, তদ্রূপ উপনিবেশ চলে যাওয়ার পরে যে উপনিবেশিকতা তার বিরুদ্ধেও লড়াই - সংগ্রাম - প্রতিরোধ জারি রাখে৷ উপনিবেশ শেষ হলেও এর নানান অভ্যন্তরীণ দিক ও উপনিবেশিকতা এখনো বহাল৷ উপনিবেশের বিরোধী সসস্ত্র সংগ্রাম ও উপনিবেশি চৈতন্য তথা উপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে মুসলিম সত্তা ও ইসলামের রাজনৈতিকতার সাপেক্ষে খোদার বাদশাহি জানান দেয় ইসলামপন্থা৷

“The muslim brotherhood is a Salafi call, a Sunni way, a Sufi truth, a political organization, an athletic group, an intellectual and scientific association, an economic company, and a social idea.”

-        Imam Hasan al banna in fifth conference of muslim brotherhood in 1939 

যেহেতু ইমাম হাসান আল বান্নার হাত ধরে ইখওয়ানুল মুসলিমিন ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাই অনেকেই ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাকে খেলাফত পুনরুদ্ধারের একটা প্রকল্প আকারে হাজির করেন। ব্যাপারটা এমন না যে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করার কোন আগ্রহ ইখওয়ানের ছিলো না। বরং শুধুমাত্র খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রকল্প আকারে ইখওয়ানকে বিবেচনা করলে মিশরের ততকালীন রাজনৈতিক পটভূমি, উপনিবেশবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা একটা প্রতিক্রিয়াশীল প্রকল্প হিসেবে ইখওয়ানকে দেখানো সহজ হয়।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ উত্তর নয়া দুনিয়ায় মিশরীয় বুদ্ধিজীবি ও রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতাই ইখওয়ান তৈরির পটভূমি তৈরি করে দেয়। ইমাম হাসান আল বান্না বাইশ বছর বয়সে ইখওয়ান প্রতিষ্ঠার পূর্বে কায়রোর দারুল উলুমে পড়াশোনা করেন। কায়রো মূলত তখন ছিলো উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯০৮ সালে মিশরের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। জাতীয়তাবাদী ওয়াফদ পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকে। এমনকি ইমাম হাসান আল বান্না নিজেও ১৯১৯ সালে মাত্র তেরো বছর বয়সে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে শরীক হন।

ইমাম হাসান আল বান্না অনুভব করেন ওয়াফদ পার্টির নেতৃত্বাধীন এই উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনে ইসলামের কোন উপস্থিতি নেই। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপনিবেশিকতার বাহক সেক্যুলার পরিবেশে এই আন্দোলন একটা অবশ্যম্ভাবী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে রূপ লাভ করছে। জনপরিসরে ইসলামের এই অনুপস্থিতি থেকেই তিনি ইসলামকে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য চিন্তাভাবনা করতে থাকেন। যা কয়েকবছর পরে ইখওয়ানুল মুসলিমীন নামে আত্মপ্রকাশ করে।

ফিলিস্তিনের সাথে মুসলিম ব্রাদারহুডের যোগসূত্র তৈরি হয় যখন হাসান আল বান্নার ভাই আব্দুর রহমান আল বান্না ১৯৩৫ সালে জেরুজালেমের গ্রান্ড মুফতি ও ইসলামী কাউন্সিলের প্রধান আমিন আল হোসাইনীর সাথে সাক্ষাত করেন। ১৯৩৬ সালের ফিলিস্তিন বিদ্রোহের সময়ে মিশরের ইখওয়ানরা ফিলিস্তিনের পক্ষে জনমত গঠন করে। একই সময়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও বৃটিশদের বিতাড়নের জন্য ইমাম হাসান আল বান্নার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। এসময় ছাত্রদের একটি দলও মিশরের জনগণের কাছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার গুরুত্ব উপস্থাপন করতে থাকে। ইখওয়ানের ছাত্রদের ছোট একটি দল ১৯৩৬ সালের ফিলিস্তিন বিদ্রোহে জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে অস্ত্রসহও লডাই করে। 

২৬শে অক্টোবর, ১৯৪৫। ইখওয়ান নেতা সাঈদ রামাদান অফিসিয়ালি জেরুজালেমে প্রথম ইখওয়ানের শাখা স্থাপন করে। এর মাত্র দুই বছরের মাথায় ফিলিস্তিনে অসংখ্য শাখা চালু করা হয়। শাখাগুলো সরাসরি কায়রো থেকে পরিচালনা করা হতো। ইখওয়ানের সাথে আমিন আল হুসাইনির সংযোগ ইখওয়ানকে তৃণমূলে জনপ্রিয় করে তোলে।

১৯৪৮ সালের এপ্রিলে ফিলিস্তিনের ওপর বৃটিশ মেন্ডেটের সমাপ্তি ঘটার আগেই ইখওয়ান মিশর থেকে তিন ব্যাটালিয়ন সেনা পাঠায়। যার নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট করণেল আহমেদ আব্দুল আযীয, আব্দুল জাওয়াদ তাব্বালা ও ক্যাপ্টেন মাহমুদ আব্দুহু। এসময় আব্দুল লতিফ আবু কুরার নেতৃত্বে জর্ডান থেকে ইখওয়ানের একটি ব্যাটালিয়ন এবং উস্তাদ মুস্তাফা আস সিবায়ী এর নেতৃত্বে ইখওয়ানের আরেকটি ব্যাটালিয়ন যুদ্ধে যোগ দেয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে ইমাম হাসান আল বান্না এক বক্তৃতায় মোট পনেরোশত মুজাহিদ ফিলিস্তিনের জিহাদে অংশগ্রহণ করেছে বলে নিশ্চিত করেন।

১৯৪৮ সালের যুদ্ধে প্রথম দিকে মিশরের সরকার ইখওয়ানকে ফিলিস্তিনের যুদ্ধে বাধা দেয়। মিশরীয় সরকারের ভয় ছিলো ইখওয়ানিদের এই সামরিক প্রশিক্ষণ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মিশরের সরকার উৎখাতে অনুপ্রাণিত করবে। যদিও এর কিছুদিন পরে মিশরীয় সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে সুয়েজ ক্যানেলের নিকট ও লিবিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দুটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করে। মাহমুদ লাবীব নামে ইখওয়ানের এক সামরিক বিশেষজ্ঞ এসব ক্যাম্প পরিচালনায় মিশরীয় সেনাবাহিনীর সাথে সমন্বয় করেন। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে মিশরীয় সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে টেনে আনাই ইখওয়ানের বড় নৈতিক বিজয় ছিলো।

১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর গাজা মিশরের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ নেয় জর্ডান। ১৯৪৮ সাল পরবর্তী মিশর ও জর্ডানের অভ্যন্তরীন রাজনীতি প্রভাবিত করে গাজা ও পশ্চিম তীরের ইখওয়ানকে। ১৯৫২ সালে ইখওয়ান সমর্থিত ফ্রি অফিসারসদের সহায়তায় ক্ষমতায় আসলেও মাত্র দুই বছরের মাথায় ইখওয়ানের উপর দমন পীড়নের সূচনা হয়। মিশরের উত্থান ঘটে আরব জাতীয়তাবাদের। আরব জাতীয়তাবাদের এই জোয়ারে অনেকেই তখন ইখওয়ান ত্যাগ করেন। এমনই একজন হলেন খলিল আল ওয়াজির যিনি ফাতাহর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও এর মিলিট্যান্ট ফ্যাকশনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। ১৯৬৭ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের পর মিশরে আরব জাতীয়তাবাদী বয়ানের পতন ঘটে। ইসলামপন্থীরা এই পরাজয়কে আল্লাহর অবাধ্যতা হিসেবে আখ্যা দেয়। এই পরাজয় মূলত সেক্যুলার সমাজতন্ত্র ও আরব জাতীয়তাবাদের পরাজয় হিসেবে জনগনের কাছে প্রতীয়মান হয়। ১৯৬৭ সালের পর গাজা ও পশ্চিম তীরের নিয়ন্ত্রণ হারায় মিশর ও জর্ডান। এসময় গাজা ও পশ্চিম তীরের নেতারা নিজেরাই ফিলিস্তিনে ইখওয়ানের একটি সবতন্ত্র শাখা প্রতিষ্ঠা করে।  

১৯৭০ সালে ফিলিস্তিনের বামপন্থী দল পিএলও জর্ডানের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। ফলে জর্ডান সরকার পিএলও এর উপর ক্র্যাকডাউন চালায় ও তাদেরকে জর্ডান থেকে বিতাড়িত করে। যা ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামে পরিচিত। অন্যদিকে ইখওয়ান গাজা ও পশ্চিম তীরে আরো সংগঠিত হতে থাকে। ইখওয়ান নেতারা ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামিক সেন্টার যা ব্যাপকহারে মসজিদ তৈরি করে ও ইখওয়ানের ব্রাঞ্চ তৈরি করতে থাকে। ১৯৭৮ সালে ইখওয়ান নেতারা তৈরি করেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ গাজা যা পরবর্তীতে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের পর ইখওয়ানের অনেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরুর চিন্তা ভাবনা করতে থাকেন। তবে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ, সামরিক অভিজ্ঞতা ও রসদের অভাবে ইখওয়ান সশস্ত্র লড়াই থেকে বিরত থাকে। কিন্তু ইখওয়ানের ফাতহি শাকাকী ইরান বিপ্লব দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত হন এবং ইখওয়ান থেকে বের হয়ে নিজেই তৈরি করে “ইসলামিক জিহাদ” নামে একটি সশস্ত্র সংগঠন। ১৯৮৮ সালে ইখওয়ানের সামাজিক শক্তির বদৌলতে ফিলিস্তিনে এক নয়া ইন্তিফাদার জন্ম হয় যার প্রাক্কালে জন্মলাভ করে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ইসলামিক মুক্তি আন্দোলন হামাস। 

হামাস আধুনিক ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন। উপনিবেশি দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে জেহাদ-প্রতিরোধ সংগ্রামে রত। হামাস ইউরোপীয় বর্ণবাদী - ইহুদি বিরোধী নয়৷ উপনিবেশি দখলদার রাষ্ট্র ও বর্ণবাদী জায়নবাদ বিরোধী। হামাসের প্রধান ব্যক্তিত্ব শাইখ আহমদ ইয়াসিন বলেন, "আমরা ইহুদিদেরকে ঘৃণা করি না এবং তাদের বিরুদ্ধে এজন্য লড়াই করি না যে তারা ইহুদি। আমরা সকল ধর্মের লোকদের প্রতি সুহৃদ। আমার একজন মুসলিম ভাই যদি আমার বাড়ি কেড়ে নেয় এবং আমাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে তাহলে আমি তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। যখন একজন ইহুদি আমার বাড়ি কেড়ে নেয় ও বিতাড়িত করে আমি তাকেও প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবো। আমি আমেরিকা, বৃটেন বা অন্য কোন দেশের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমি সকল মানুষকেই ভালোবাসি এবং সকলের কল্যাণ কামনা করি। একইভাবে আমি ইহুদিদেরও কল্যাণ চাই। ইহুদিরা সবসময়ই আমাদের সাথে বসবাস করেছে এবং আমরা তাদেরকে কখনোই আক্রমণ করিনি। আমরা কখনোই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। তারা আমাদের প্রশাসনের উচ্চপদগুলোতে কাজ করেছে। কিন্তু তারা যখন আমাদের বাড়ি দখল করেছে, আমাদেরকে বিতাড়িত করেছে তখনই আমরা প্রতিহত করেছি।" উপনিবেশি - দখলদার রাষ্ট্র  ইসরাইল ও জায়নবাদের বিরুদ্ধে হামাসের প্রতিরোধ - সংগ্রাম - জেহাদ।  আলজেরিয়ার অভিজ্ঞতায় ফাঁনো দেখান ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র শুধু  কেবল উপনিবেশের সার্বভৌমত্বকেই নাকচ করে না  বরং মানব হিসেবে তাদের মর্যাদা কেড়ে নেয়৷ ফাঁনোর আইডেন্টিটি নিয়ে মার্ক্সীয় ছকের বোঝাপড়া  মুসলিম অস্তিত্বময়তা ( Islamic / Muslim Ontology) বুঝতে দেয় না৷ মুসলিম অস্তিত্বময়তা না বুঝলে মুসলিম সত্তার রাজনৈতিকতা বুঝা যায় না৷ উপনিবেশের বিরুদ্ধে মুসলিম সত্তার জেহাদ- প্রতিরোধ ইউরোপীয় মানবিক মর্যাদার ছকেই বুঝতে হয় বা বাধ্য করা হয় উপনিবেশিকতার সিলসিলার জন্য। উপনিবেশ বিরোধী ইসলামপন্থা উপনিবেশের ভেতর-বাহিরের যে সংকট তার বিরুদ্ধে লড়ে যা মাহমুদ মামদানি সুন্দর ভাবে তুলে ধরছেন।  

" আধুনিক রাজনৈতিক ইসলাম উপনিবেশবাদের প্রতিরোধ হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। উপনিবেশবাদ ভেতর-বাহিরের উভয় সংকট জাহির করে৷ "

২. হামাস, জিম্মাদারি ও আল আকসা তুফান

উপনিবেশ-দখলদারি বিরোধী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন হামাস ঈসায়ী ২০০৬ হতে গণতান্ত্রিক তরিকায় ফিলিস্তিনের জনগনের জিম্মাদারি নেয়৷ জিম্মাদারি শব্দটাতে আমানতের একটা সুক্ষ দিক আছে, যা ইসলামের রাজনৈতিকতার বুনিয়াদ হতে আসছে। ০৭ ই অক্টোবরে যখন হামাসের  সামরিক শাখা আল কাসসাম বিগ্রেড উপনিবেশি-দখলদার রাষ্ট্র ইসরাইলে আল আকসা তুফান চালিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর অনেককে বন্দী  করে এক বন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব দেয়৷ কিন্তু ইসরাইল ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যখন গাযায় নিরীহ মানুষদের উপর গনহত্যা করেও, তাদের সম্মিলিত চৈতন্যকে শেষ করতে না পেরে, কাতারের মধ্যস্থতায় বন্দী বিনিময় হয়৷ বন্দী বিনিময়ের দিকটি আমাদের হামাস ও ফিলিস্তিনের আজাদির লড়াই নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে উস্কে দেয়৷ বন্দী বিনিময়ে যখন হামাস পশ্চিম তীরের জনগনকে মুক্ত করে, তখন অনেকে এটাকে শুধুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রনোদিত আকারে পাঠ করে৷ মাহমুদ আব্বাসের সরকার পিএলও এর বিরুদ্ধে এক কৌশলগত বিজয় হিসাবে চিহ্নিত করে৷ এই অক্ষরবাদী শনাক্তি হামাসের বন্দী বিনিময়ের মর্মের সন্ধান করতে নাকামিয়াব। তাহলে সেই মর্ম কি? হামাসের ০৭ ই অক্টোবর আল আকসা তুফানের সাথে জেহাদ ও জিম্মাদারির সম্পর্ক বোঝা দরকার। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুরা নিসায় এরশাদ করেন, " আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’

হামাস পশ্চিমের তীরের নিয়ন্ত্রক না হয়েও যে বন্দী বিনিময়ে পশ্চিম তীরের জনগনকে আজাদ করল তা হামাসের অন্টোলজিক্যাল মেনিফেস্টেশন যে ইমান, জেহাদ তার ই দলিল ৷ গণতান্ত্রিক তরিকায় হামাসকে গাযার অভিভাবক মনে হবে শুধু, বা ফিলিস্তিনি জাতি বর্গের সাপেক্ষে ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদ দিয়ে এই জিম্মাদারির পাঠ হবে৷ এই সকল দিক ই প্রলেপ ( Appearance) । কিন্তু হামাসের অন্টোলজিক্যাল মেনিফেস্টেশনের দরুন আমরা দেখি পুরো ফিলিস্তিনের অভিভাবক হামাস। পশ্চিম তীরের সেই নারী-শিশুদের আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ,আল্লাহর প্রশ্ন যে তুমরা কি জেহাদ করবা না? তুমরা কি অভিভাবক হবা না? আর হামাস আল্লাহর সেই প্রশ্নের জবাব ০৭ ই অক্টোবরে রকেট ছুড়বার মধ্য দিয়ে বলেছে আল্লাহুম্মা লাব্বাঈক।

 ৩. ইসলামপন্থা,শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম ও হামাস

ডিসেম্বর, ১৯৮৮। আমেরিকার ওকলাহোমা সিটিতে ইসলামিক এসোসিয়েশন অফ প্যালেস্টাইন (IAP) আয়োজিত এক র‍্যালিতে আব্দুল্লাহ আযযাম (রহ) উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে ঘোষণা দেন,"আমি এখন সেই পঙ্গু মানুষটির কথা বলতে চাই যার দীক্ষা পেয়ে জায়নবাদীদের ফিলিস্তিনিরা পাথর দিয়ে পাথর দিয়ে প্রতিরোধের হিম্মত করছে। এই মানুষটি নিজে চলাচলে অক্ষম বটে, কিন্তু তা একটা গোটা প্রজন্মকে চালনার পথে তাঁর জন্য বাধা হতে পারে নি।" মানুষটি আর কেউ নন, তিনিই হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শাইখ আহমাদ ইয়াসীন (রহ)। শাইখ ইয়াসীনের (রহ) প্রতি ড. আযযামের এমন শ্রদ্ধামিশ্রিত বক্তব্যই ইঙ্গিত দেয় - তিনি ও তাঁর রাজনৈতিক - সামরিক সংগঠন হামাসকে ঘিরে আযযামের আশা-ভরসা ও ভালোবাসা কতটা প্রবল ছিল।

আব্দুল্লাহ আযযামের ব্যাপারে ফিলিস্তিনি জনগণের একটি অংশ এবং মুসলিমদের কারো কারো ক্ষোভ ছিল এই বলে যে, উনি নিজ ভূমি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জি*হাদ ছেড়ে দূর পরবাসে পাড়ি জমিয়েছেন। আশির দশকের শেষভাগে জার্মানিতে এক বক্তব্য প্রদানকালে শ্রোতাদের মধ্য থেকে এক ফিলিস্তিনি একই অনুযোগ করলে আযযাম উত্তরে বলেন,"ভাই আমার! জিহাদের জন্য কি প্রস্তুতির দরকার নেই? ফিলিস্তিনের সন্তানরা জিহাদের জন্য কোথায় প্রস্তুতি নিবে? জর্ডানে যাতে তারা তোমাদের জবাইয়ের সুযোগ পায়? নাকি সিরিয়াতে হাফেজ আল আসাদের অধীনে? অথবা মিশরের হোসনি মোবারকের সাথে?.."

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামকে মার্ক্সবাদী পিএলও হাইজ্যাক করে নেয়ায় আযযাম এই সংগ্রামে যোগ দিতে আগ্রহী হন নি। আযযাম আমৃত্যু বিশ্বাস করেছেন, কোনো 'জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম' বা 'জালেম-মজলুম তত্ত্ব' নয় বরং নববী পদ্ধতিতে জিহাদের মাধ্যমেই কেবল ফিলিস্তিন ও আল - আকসার মুক্তি সম্ভব। আফগানে পাড়ি জমানোর পেছনে সোভিয়েত কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জিহাদ ছাড়াও আযযামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টার্গেট ছিল - আফগানে মুজাহিদদের জন্য একটা শক্ত ঘাঁটি প্রস্তুত যেখান থেকে ট্রেনিং দিয়ে তিনি মুজাহিদ বাহিনীকে ফিলিস্তিনের জিহাদে প্রেরণ করতে সক্ষম হবেন।

যে জিহাদের অনুপস্থিতির জন্য আযযাম ফিলিস্তিনের সেক্যুলার ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট ত্যাগ করেছিলেন, সেই জিহাদের বাস্তব রূপ দিতে যখন হামাসের প্রতিষ্ঠা হল - আযযাম আর দেরি করলেন না। জীবনের শেষ দু'বছর তিনি ফিলিস্তিন নিয়ে টানা লেখালেখি করে গেলেন, হামাসের জন্য ফান্ডরেইজ করলেন আরব বিশ্বে ঘুরে ঘুরে এবং আফগানে অনেক ফিলিস্তিনি যুবককে আল-আকসা মুক্তির জিহাদে প্রেরণের নিয়তে প্রশিক্ষণ দিলেন। উভয়ের রাজনৈতিক চৈতন্যের ভিত্তিমূল ইখওয়ানুল মুসলিমীনের মতাদর্শের উপর দণ্ডায়মান বিধায় হামাসের সাথে আযযামের আত্মিক - আদর্শিক বন্ধন কীরকম ছিল তার একটা ধারণা আমরা পাই ১৯৮৮ সালের অগাস্টে প্রকাশিত হামাসের সাংগঠনিক চার্টারে যেখানের অধিকাংশ অনুচ্ছেদ আযযামের বৈশ্বিক ইসলামিক জিহাদের তত্ত্বকে প্রতিফলিত-প্রতিধ্বনিত করেছে। যেমন এই চার্টারের অনুচ্ছেদ ১৩ তে হামাস ঘোষণা দিয়েছে, ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য তাদের কাছে কোনো শান্তি-চুক্তি বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে এই সমস্যার সমাধান গ্রহণযোগ্য নয় - সমাধান হিসেবে শুধুমাত্র সশস্ত্র জিহাদই তাদের কাছে বিবেচ্য। আযযামের প্রচারিত জিহাদ-বিষয়ক লেখালেখিতেও দেখা যায়, তিনি যায়োনিস্ট ইসরাইলের সাথে যেকোনো রকম শান্তি-চুক্তি বা যুদ্ধবিরতির ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং ফিলিস্তিনের মুক্তি যতদিন না হচ্ছে ততদিন সশস্ত্র জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন।

আযযামের কাছে হামাস ও তার লড়াইয়ের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু - তা বোঝাতে বোধ করি হামাসকে নিয়ে লেখা তাঁর বই "Hamas : the Historical Roots and the Charter" খানাই যথেষ্ট যেখানে আযযাম স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, এই যুগে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার স্বপ্ন তিনি একমাত্র হামাসের মাধ্যমেই দেখেন। হামাসের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও তিনি "Office of the Services for Mujahideen in US" দ্বারা অর্থসংস্থান করেছেন, পশ্চিম তীর ও গাযা উপত্যকায় পিএলওর নামের আড়ালে চালিত বিভিন্ন সংগঠন যেমন Palestinian Youth Association ও Palestinian Student Association এর বরাতে হামাসকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করাতে জোর তদবির তিনি চালিয়েছেন। হামাসও তার জন্মলগ্নে আযযামের এই নিঃস্বার্থ অবদানগুলো বারেবারে বিভিন্ন চিঠি, বক্তব্য - বিবৃতি ও সাংগঠনিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে স্বীকার করেছে। আযযামের শাহাদাতের এক মাসের মাথায় গাযা উপত্যকায় হামাস আযযামের গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে এক সাধারণ ধর্মঘট পালন করে, এর কিছুদিন পর হামাসের মাসিক 'লাহিব আল মারাকাহ'তে আযযামের রক্তের বদলা নেয়ার সংকল্প ফুটে উঠে। আযযামের সংগ্রাম ও স্মৃতির প্রতি হামাস সম্ভবত সবচেয়ে বড় সম্মানটা দেখিয়েছে পশ্চিম তীরে তার সামরিক শাখার নামকরণ "শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম ব্রিগেড" - করার দ্বারা। পরবর্তীতে এই ব্রিগেড আর গাযা উপত্যকার সামরিক শাখা একীভূত হয়ে আজকের ইয আদ-দীন আল কাসসাম ব্রিগেড রূপে আবির্ভূত হয়।

সময়ে সময়ে হামাসের বিভিন্ন সামরিক অভিযানের নেপথ্যের অন্যতম অনুপ্রেরণাও ছিল আযযামের শিক্ষা ও আদর্শ। হামাসের জিহাদ ও ইসতিশহাদের তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রদানের কারিগর আযযাম - তার প্রমাণ মিলে ২০০১ এর জুনে একুশ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহতের ঘটনায়। হামলাকারী সাইদ হাসান আল হুতারির সরল স্বীকারোক্তি: "আমি যায়োনিস্ট সমর্থক এই বিশ্বকে স্মরণ করাতে চাই সেই কথাগুলো যা আব্দুল্লাহ আযযাম আমার সামনে একদা বলেছিলেন... যদি জিহাদের জন্য ইদাদ (প্রস্তুতি) নেয়া সন্ত্রাস হয়, তবে আমরা সন্ত্রাসী। যদি আমাদের সম্মান রক্ষা উগ্রতা হয়, তবে আমরা উগ্রবাদী। আর আমাদের শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ করাটা যদি মৌলবাদ হয়, তবে নিশ্চয় আমরা মৌলবাদী।"

ইসরাইলে হামাসের পরিচালিত সর্বশেষ ৭ অক্টোবরের আল-আকসা ফ্লাড অপারেশনের তিন মাস হতে চলল। যায়োনিস্টদের বিরুদ্ধে হামাস চালিত আল কাসসাম ব্রিগেডের মুজাহিদদের লড়াই থামার কোনো লক্ষণ আপাতত আমরা দেখছি না। এই হামলা ও লড়াই চলাকালীন প্রকাশিত হামাসের ভিডিও বার্তায় আমরা দেখেছি, এই লড়াইয়ের নেপথ্যে ফাতাহ বা অন্যান্য জাতীয়তাবাদী দলের ন্যায় কোনো সেক্যুলার ন্যাশনালিস্ট সংগ্রামের বাসনা তার নেই কিংবা এই লড়াই তাদের কাছে মার্ক্সিস্ট পিএলওর মত কলোনিয়াল জালেমের বিরুদ্ধে কলোনাইজড মজলুমের লড়াই নয়। এই লড়াই শুধুমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রসুলের নির্দেশিত পন্থায় চালিত ঈমানের পক্ষে যায়োনিস্ট কুফর বিত-ত্বাগুতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদি সংগ্রাম, এই লড়াই আল কাসসামের সংগ্রামী মুজাহিদদের নিকট আল-কুরআনের সূরা নিসার সেই আয়াতে আল্লাহর দেয়া আদেশ পালন মাত্র যেখানে আল্লাহ ইরশাদ করেন, "(তর্জমা) তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে এবং অসহায় নারী-পুরুষ আর শিশুদের (রক্ষার) জন্য লড়াই করবে না, যারা দু‘আ করছে- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এ যালিম অধ্যূষিত জনপথ হতে মুক্তি দাও, তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের বন্ধু বানিয়ে দাও এবং তোমার পক্ষ হতে কাউকেও আমাদের সাহায্যকারী করে দাও।" কী গাজা উপত্যকা আর কী পশ্চিম তীর - সুদীর্ঘ পঁচাত্তর বছর যাবৎ উভয় জনপদের মুসলিম নারী-পুরুষ ও নিষ্পাপ শিশুরা আয়াতে উল্লিখিত জালেমদের হাতে বন্দী-নির্যাতিত-শহীদ অসহায় নারী-পুরুষ ও শিশুদের সাক্ষাৎ নমুনা আমাদের সামনে হাজির করছে আর হামাস - নেতৃত্বাধীন আল কাসসাম ব্রিগেডের সাহসী সেনানীরা এদের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া কুরআনী নির্দেশ বাস্তবায়নকারী মুজাহিদ দল।

শহীদ আব্দুল্লাহ আযযাম তো এই মুজাহিদ দলের স্বপ্নই দেখে গেছেন আমৃত্যু, ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমিতে এরকম মুজাহিদ দল ও তাদের জিহাদের অনুপস্থিতির আক্ষেপ তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে পুরো সত্তর ও আশির দশক জুড়ে। ফিলিস্তিনিদের জিহাদের পথে উদ্বুদ্ধ করতে লেখালেখি করেছেন প্রচুর, দিয়েছেন বক্তব্য - বিবৃতি। অবশেষে যখন ফিলিস্তিনের সন্তানরা হামাস গঠনের মধ্য দিয়ে জিহাদের পন্থায় এগুলো, আযযামের আক্ষেপ যেন ঘুচবার পালা। কিন্তু তাকদীরের অমোঘ নিয়মে তাঁকে শহীদ করে দেয়া হল দূর পরবাসে, হামাসের হয়ে ফিলিস্তিনের সূর্যসন্তান আর জন্মভূমির মুক্তির লড়াইয়ে শামিল হতে পারলেন না। আযযাম না পারলেও আযযামের প্রিয় মাতৃভূমি ও আল আকসাকে কুফরের পঙ্কিলতা থেকে ইচ্ছাকে বাস্তব রূপ দেয়ার দায়িত্ব হামাস বুঝে নিয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে যে জিহাদ ও ইসতিশহাদ কেবল আযযামের লেখনীতে সীমাবদ্ধ ছিল, ৭ অক্টোবরের অভিযানের মধ্য দিয়ে হামাস সেটার চাক্ষুষ কাঠামো উপস্তাপন করে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় আযযামের লিগ্যাসির পূর্ণতা নিশ্চিত করল যেন। শহীদ ড. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম রহিমাহুল্লাহ-র সাথে হামাসের এই ঐতিহাসিক-রুহানী-আদর্শিক রিশতা বারে বারে আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে, উম্মিদ রাখি ভবিষ্যতেও হবে ইনশাআল্লাহ।

৪.হামাস বিহীন ফিলিস্তিন : ইসলাম ও ইসলামপন্থা বিয়োজনের মতাদর্শিক রাজনীতি

ঢাকায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম নিয়ে নানা সমাবেশ-সেমিনার- ম্যাগাজিন- বাতচিত- বাহাস বা পর্যালোচনায় হামাসকে বাদ দিয়ে, পিএলও এর অতীত ইতিহাসের স্মৃতি পুনঃ উৎপাদন দেখি৷ কেউ কেউ দাবি করে হামাসের হঠকারিতার জন্য গাযার সাধারণ মানুষদের উপর চলছে গনহত্যা৷ এই চিন্তা প্রধানত মার্ক্সিস্টদের একাংশ ও শাসকের আনুগত্য করা এক বিশেষ বর্গের উলামার। আরেক ধারার মার্ক্সিস্ট দাবি করে ফিলিস্তিনে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম হচ্ছে৷ এটা ইসলামি বা কমিউনিস্টরা করছে কিনা তা মুখ্য নয়। এখানে ফাতাহ থেকে বের হওয়া বিভিন্ন মিলিশিয়া দল প্রতিরোধ সংগ্রামে রত৷ এছাড়া ফিলিস্তিনি খিস্ট্রান, ইহুদিদের সংগ্রাম এটা৷ এটা শুধুই ইসলাম বা মুসলিমের জেহাদ বা প্রতিরোধ সংগ্রাম না৷ উপরিক্ত চটকদারি চিন্তার অচেতন হলো ইসলামপন্থা, তার রাজনৈতিকতা ও তার ক্ষমতায়নের বিরোধিতা করে হয় খারিজ অথবা খোজাকরণ।

এই খারিজ বা খোজাকরনের রাজনীতি যে চিন্তা পদ্ধতির মাধ্যমে হয় তার পর্যালোচনায় ই হাজির করার কোশেশ করব৷ মার্ক্সীয় ইতিহাস বীক্ষায় ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম হাজির হয় জালেম-মজলুমের দন্ধের ইতিহাস হিসাবে। ফেদরিখ এঙগেলস জার্মানির কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে দেখান যে ধর্মীয় মোড়কেও শ্রেণী সংগ্রাম হতে পারে ; যেখানে ধর্মীয় দিকটা প্রলেপ বা ঢাকনা। মর্মটা শ্রেণী সংগ্রাম। এই ছকের সাথে ক্ষমতা সম্পর্কের রিশতা জুড়ে জালেম-মজলুম বয়ান উৎপাদন করে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামকে ব্যখা করা হয়৷ আরেক ধারার মার্ক্সিস্ট উপনিবেশের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ছকে বয়ান হাজির করে৷ উদা হিসাবে আলজেরিয়ার জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম হাজির হয়৷ উভয় ধারা ই শব্দের নি-ধর্মীকরন প্রকল্পে রত৷ আল আকসা তুফানে আল্লাহ আকবার তাকবির তাদের কাছে শুধুই মার্ক্সীয় ছকের মজলুমের ডাক৷ অথচ আল্লাহু আকবার স্লোগান মার্ক্সীয় ছকের নি-ধর্মীকৃত রেটোরিক নয় শুধু, এর অন্টোলজিক্যাল অর্থ আছে৷"

এটা একইসাথে তাওহীদের ঘোষণা; খোদা আর তাঁর বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ঘোষণা। এটা খোদ মুসলমানিত্বের ঘোষণা। কোন আন্দোলনকে জালিম-মজলুম এই বাইনারিতে দিয়ে আটকে ফেলার দীর্ঘমেয়াদী একটা সমস্যা হচ্ছে সেই আন্দোলনের অন্টোলজিক্যাল ও মোরাল লেজিটিম্যাসিকে দুর্বল করে দেয়া। " [ মাহমুদ নাইম]

এইযে মুসলিমের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা ইনকার, ইসলামের রাজনৈতিকতা ও ক্ষমতায়নের খোজাকরণ জালেম-মজলুম বয়ানে নিহিত তা গাযা হতে দিল্লি বা ঢাকায় হরহামেশা দেখা যায়৷ আবার যারা উপনিবেশের বিরুদ্ধে মুক্তি সংগ্রামে আলজেরিয়ান মার্ক্সিস্ট দল এফএলএনের জিগির করে, তারা হামাসের নাম নিতে বিরক্ত-বিব্রত বোধ করে। এই বিরক্ত-বিব্রত বোধের কারন কি? আলজেরিয়ান মুক্তি সংগ্রামে ত এফআইএসের মতোন ইসলামিক রাজনৈতিক সসস্ত্র দল ও ছিল। তো তাদেরকেও গুম করা হয় কেন? এফএলএনের সংগ্রামের তীব্রতার জন্য? নাকি এফএলএন মতাদর্শিক ভাবে খুবই আপন। আর এফআইএস বা হামাসের মুখ দেখেও অচেনা লাগে তাই তাদের কর্তা হিসাবে বর্গীয়করণ করতে এত অনীহা! হামাসের মুখ দেখে যায় কি চেনা?  

মুখ দেখে পড়শি হামাসকে চিনতে পারে নাই খোদ ফিলিস্তিনি মার্ক্সিস্ট এডওয়ার্দ সাঈদ। সাইদ সহ দেশীয়- আন্তর্জাতিক পিএলও প্রেমী মার্ক্সিস্টদের দাবি হামাস সাম্রাজ্যবাদী ইসরাইল-আমেরিকার তৈরি। এই দাবি যথেষ্ট আধিপত্যবাদী, যার মূল তাত্ত্বিক মিশরীয় মার্ক্সিস্ট সামির আমিন। সামির আমিন তার বহুল চর্চিত প্রবন্ধ " রাজনৈতিক ইসলাম সাম্রাজ্যবাদের সেবক " বয়ান ইসলামপন্থা বোঝাপড়ার নীতি হিসাবে পরিগনিত হয়। অথচ সামির আমিনের এই চিন্তাকে সম্যসায়িত করে পর্যালোচনা হাজির করে পাকিস্তানি মার্ক্সিস্ট তারিক আমিন খান। তারিক আমিন খান সমির আমিনকে স্মরণ করিয়ে দেয় ঔপনিবেশিক ভারত ও আলজেরিয়ার কথা, যেখানে রাজনৈতিক ইসলাম বা ইসলামপন্থার উপনিবেশ বিরোধী সংগ্রাম রয়েছে৷ সামির আমিন ও এডওয়ার্দ সাইদের চিন্তাকে মূলনীতি হিসেবে নিয়ে নানা ভূখণ্ডের মার্ক্সিস্টরা ইসলামপন্থা বিয়োজনের মতাদর্শিক রাজনীতি করে, যার শিকার মিশরের ইখওয়ান ও বাংলাদেশে জামাতে ইসলামি৷ তাহলে বোঝা যাচ্ছে হামাস বিয়োজন রাজনীতি বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় না৷ ঐতিহাসিক - মতাদর্শিক - রাজনৈতিক সম্পর্ক যুক্ত এর সাথে। তাই, হামাসের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা- রাজনৈতিকতা-ক্ষমতায়ন খারিজ বা খোজাকরণ করবার যে মতাদর্শিক রাজনীতি তা মূলত এন্টাই ইসলামিজম৷

মার্ক্সিস্ট, উদারনৈতিক প্রগতিশীলদের আরেক বয়ান পাওয়া যায় সিভিল-হিউম্যান রাইটস ভিত্তিক রাজনীতির বয়ানে৷ মানবিক অধিকার এর রাজনীতির দরুন এরা দাবি করে ইসরাইল রাষ্ট্র মানবিক মর্যাদা বা অধিকার লঙ্ঘন করছে৷ এই মানবিক অধিকার ভিত্তিক রাজনীতি যে ফাঁকা বুলি তা ইসরাইল যখন গাযায় গনহত্যা চালালো তা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠন বা ইউরোপীয় মানবিক অধিকার রাজনীতি তীর্থ ভূমির অভিভাবকেরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল। আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার দিয়ে গাযায় চলমান গনহত্যা বোঝা যায় না৷ এর নাকামিয়াবি নির্দেশ করে ক্যামেরুনীয় তাত্ত্বিক আশিলি এম্বেম্বে৷ আশিলি এম্বেম্বে দেখান ইসরাইল রাষ্ট্র ফিলিস্তিনে লাশতান্ত্রিক রাজনীতির ( Necro politics) চর্চা করছে৷ লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার চর্চার সাথে ইসরাইল রাষ্ট্রের রিশতা প্রকট। ফিলিস্তিনি জনগনের উপর লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার (Necro- Power) চর্চাকে শুধু অধিকার ভিত্তিক রাজনীতি দিয়ে বুঝা যায় না। উল্টো ফিলিস্তিনি জনগনের জেহাদি-প্রতিরোধ সংগ্রামকে সংকোচন করা হয়।

‘The desire for an enemy, the desire for apartheid for separation and enclaving, the fantasy of extermination- all today occupy the space of this enchanted circle’

লাশতন্ত্র কায়েম করা ইসরাইলি রাষ্ট্রের বাসনা ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ-নির্মূল-দখলদারি। এই লাশতন্ত্র ইসরাইল রাষ্ট্রের একক বুনিয়াদি প্রতিচ্ছবি না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রেও এর দেখা মেলে৷ প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বয়ান বিশ্লেষক তরিকুল হুদা তার, " সাম্য-মানবিক মর্যাদা তথা স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের হম্বিতম্বি, গালগপ্পোঃ শাহাবাগী লাশতন্ত্রের খতিয়ান" প্রবন্ধে দেখান কিভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে  শাহবাগ আন্দোলন ইসলামপন্থা নির্মূলের জন্য লাশ রাজনীতি করার উপায় বাতলে দেয়৷ বাংলাদেশেও লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার (Necro- Power) চর্চাকে শুধু অধিকার ভিত্তিক রাজনীতিতেও পর্যবসিত করা হয়৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে থেকেও মার্ক্সিস্ট বা উদারনৈতিক প্রগতিশীলরা মুলে হাত না দিয়ে তাদের মতাদর্শিক রাজনীতির বিবেচনায় শাখা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে৷ মুলে হাত না দিয়ে শাখা নিয়ে নাড়াচাড়া করার মাধ্যমে যে মতাদর্শিক রাজনীতি তাকে হুদা ইউনিভার্সল অফ মেটাফিজিক্সের ফ্যান্টাসি হিসাবে শনাক্ত করে উপরিক্ত মার্ক্সিস্ট, উদারনৈতিক প্রগতিশীলদের অভিযুক্ত করেন৷ গাযা হতে কায়রো, কাশ্মীর বা ঢাকায় যে লাশতান্ত্রিক ক্ষমতার (Necro- Power) চর্চা হচ্ছে তাকে অধিকার ভিত্তিক রাজনীতিতে পর্যবসিত করার সীমাবদ্ধতা পরিস্কার৷ এই অধিকার ভিত্তিক রাজনীতি মূলত রিপাবলিকানইজমের অংশ, যেখানে মানুষ শুধুই নাগরিক। মুসলিম সত্তার রাজনৈতিকতা যেখানে নাগরিক অধিকার ভিত্তিক রাজনীতির মধ্যে দিয়ে খোজাকরণ করা হয়।

এই অধিকার ভিত্তিক রাজনীতি কখনো বলবে না আন্দালুসিয়ার উচ্ছেদ-নির্মূলের সাথে ফিলিস্তিন-কাশ্মীর- আরাকানের  উচ্ছেদ-নির্মূল-দখলদারির সম্পর্কের মর্ম (Essence) ইসলাম ও মুসলিম সত্তা। এই অধিকার ভিত্তিক রাজনীতির চটকদারি মুসলিম সত্তার রাজনৈতিকতা, জেহাদ ও ইসলামপন্থার প্রতিরোধ সংগ্রাম গুম করে৷ কাশ্মীরি গবেষক আহমাদ বিন কাশিম এই মার্ক্সিস্ট-উদারনৈতিক প্রগতিশীল ধারাকে কাশ্মীরের আজাদির লড়াইকে নাই করবার চেষ্টার জন্য শিয়াল বর্গে চিহ্নিত করে যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের কাজকে নিন্দা করলেও, অভিন্ন বাসনা প্রকাশ করে৷

মরক্কোর দার্শনিক আব্দুররাহমান ত্বাহা ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম নিয়ে মার্ক্সিস্ট ও উদারনৈতিক প্রগতিশীলদের সেক্যুলার জ্ঞানতত্ত্বীয় সহিংসতায় (Secular Epistemic violence)  লিপ্ত বলে অভিযুক্ত করেন। ত্বাহা আলাপ শুরু করেন গায়েবের ধারণা দিয়ে যা হেগেলিয়ান- মার্ক্সিস্টরা তাদের চিন্তা পদ্ধতির দরুণ শুরুতেই গুম করে দিয়ে জালিম- মজলুমের জিগির তুলে৷ ত্বাহা সুরা ইসরার পয়লা আয়াতে রাসুলুল্লাহ সাঃ আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের ঘটনা তুলে ধরেন৷ ত্বাহা ফরমান, রাসুলুল্লাহ সাঃ আলাইহি ওয়াসাল্লামের গায়েবি জগৎ এর যাত্রা, মেরাজের সাপেক্ষে ফিলিস্তিন হতে গায়েবের ধারণাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না৷ ত্বাহা গায়েবের ধারণাকে সামনে রেখে আধ্যাত্মিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করেন৷

২০২১ সালে গাযান এক মা বলেছিলেন এই আল আকসায় রাসুলুল্লাহ সাঃ আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে আসছিলেন৷ আল কুদসের জন্য তার সন্তানের কুরবানি নিয়ে কথা বলা কালীন উল্লেখ করেন, " Quds is the place where the Prophet (SAWS) came on a journey to it, from where can [we] replace it? We Palestinians are always like this [...] And, if there comes a hundred million wars, it will not break our determination or will. " ত্বাহা আব্দুররাহমান ঠিক এই গায়েবের সাথে ফিলিস্তিনিদের রিশতাটা শনাক্ত করেন যা উপরিক্ত শহীদ মায়ের মুখেও ফুটে উঠেছে।ত্বাহা এরপর স্মরণ করিয়ে দেয় উপনিবেশি-দখলদার ইসরাইল রাষ্ট্র শুধু ভূমি দখল - উচ্ছেদ - নির্মূলে শান্ত নয়। ইসরাইল রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের উপর আল হুলুল বা আত্মিক দখলদারিত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কারন এই আত্মিক দখলদারিত্ত্ব ফিলিস্তিনিদের ফিতরতকে ভেঙে বা বিকৃত করে দিতে পারে যার ফলে জেহাদ- প্রতিরোধ ছাড়া ঔপনিবেশিক - দখলদারিকে দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্পে রুপ দেওয়া যায়।

ত্বাহার বয়ানে আল হুলুল বা আত্মিক দখলদারির ফলে ফিতরত ভেঙে ফেলে যে সহিংসতা ইসরাইল রাষ্ট্র চালাতে চায় তা হেগেলিয়ান চৈতন্য দিয়ে বন্দী করা যায় না৷ "The Israeli state has proved utterly ineffectual in colonizing the collective consciousness of the Palestinian people, of erasing their historical memory, of destroying their spirit to resist by militarily convincing them that resistance is futile. " মশহুর তাঞ্জিনিয়ান নারীবাদী ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সুনেরা থোবানির বর্ণিত ইসরাইল রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের সম্মিলিত চৈতন্যের( Collective Consciousness)  উপনিবেশ- দখলদারিত্ব নিতে পারে নাই। এই সম্মিলিত চৈতন্য বা কালেক্টিভ কনশাসনেসের উপনিবেশয়ানের নাকামিয়াবির সাথে

ত্বাহার ফিলিস্তিনিদের আল হুলুল বা আত্মিক দখলদারির নাকামিয়াবির একটা বুনিয়াদি ফারাক আছে। সুনেরা হেগেলিয়ান প্যারাডাইম থেকে বের হতে পারে নাই। কিন্তু ত্বাহা হেগেলিয়ান প্যারাডাইম হতে বের হয়ে ইসলামের জ্ঞানতত্ত্বীয় পাটাতন হতে এই নাকামিয়াবিকে শনাক্ত করছেন৷

তবে সুনেরা বা ত্বাহা উভয়ই ইসরাইল রাষ্ট্র কর্তৃক যে ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক স্মৃতি গুম করা বা ধংস করাকে চিহ্নিত করেছেন৷ সুনেরা দেখান ইসরাইল রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক স্মৃতি তাদের চৈতন্যকে নাই করতে চায়,এবং ০৭ ই অক্টোবরের পর মামরিক ভাবে ফিলিস্তিনিদের উপর গনহত্যা করেও তা সফল করতে পারেনি বরং তারা ব্যর্থ হয়েছে৷' That spirit of resistance, that historical memory, has only gained in intensity and strength during these past three weeks." উল্টো ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ আরও তীব্র মাত্রা পেয়েছে৷ ত্বাহার বরাতে ফিলিস্তিনের এই প্রতিরোধ তীব্র মাত্রা পাওয়ার আধ্যাত্মিক দিকটা হাজির করে৷ একইসাথে ইসরাইল রাষ্ট্র কিভাবে ফিলিস্তিনিদের আধ্যাত্মিক শক্তির বিরুদ্ধেও দখলদারি করে তা সুলুকসন্ধান করে৷ ত্বাহা দেখান ফিলিস্তিনিরা আমানার রক্ষক। আল্লাহর আস্থাভাজন৷  ফিলিস্তিনের প্রধান কাজ ফিলিস্তিনের নবীগন, বিশেষত শেষ নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আধ্যাত্মিক

মূল্যবোধ অক্ষুণ্ন ও সংরক্ষণ রাখা৷ ত্বাহা রাসুলুল্লাহ সাঃ আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের ঘটনা ব্যবহার করে দেখান ফিলিস্তিনিদের মুরাবাতাহ বা সুরক্ষা সিজদার সাথে জড়িত৷ ত্বাহা এখান থেকে সার টেনে বলেন, ফিলিস্তিনের লড়াই শুধু শারিরীক নয়, আধ্যাত্মিক ও বটে৷ ত্বাহা বলেন, ফিলিস্তিনের মুকাওয়ামা ( প্রতিরোধ) শেষ অবধি রুহেরই মুকাওয়ামাই৷  ইসরাইল রাষ্ট্র ও তার বাহনী মসজিদুল আকসাতে ফেরেস্তাদের সাথে নামাজ পড়তে দেয় না। কারন এই ফেরেস্তাদের সাথে নামাজ পড়বার মধ্যে দিয়ে যে ইমানি- রুহানি তাকাত হাসিল তাতে আধ্যাত্মিক দখলদারি সম্ভব নয়। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক জায়গা দখল নিয়ে, এর থেকে জুদা করবার মাধ্যমে ফিতরতকে ভেঙে দিয়ে আধ্যাত্মিকতার দখলদারি নিতে চায় যা সুনেরা থোবানি এতিহাসিক স্থাপনার উদাহরণ দিয়ে হেগেলীয় স্পিরিটের মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করেছে৷

 মার্ক্সীয় ছকে জালেম-মজলুম বা  জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বা উদারনীতিবাদী - রিপাবলিকান ছকে নাগরিক অধিকার - মানবিক মর্যাদা দিয়ে দেখবার যে তরিকা আমাদের সেক্যুলার চিন্তকরা প্রস্তাব করে তা খন্ডিত, অসম্পূর্ন ও অকার্যকর৷ একইসাথে তা সেক্যুলার জ্ঞানতত্ত্বীয়  সহিংসতায় লিপ্ত যা মুসলিম রাজনৈতিক কর্তাসত্তা, ইসলামের রাজনৈতিকতা, ইসলামপন্থী সংগঠন হামাস, তার জেহাদ- প্রতিরোধ- জিম্মাদারি ও ইসলামের তুরাসকে হয় গুম করে অথবা উপেক্ষা করে। দেখেও না দেখবার ভান করা এই সেক্যুলার চিন্তকদের গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক বর্ণিত Sanctioned Ignorance বা আরোপিত উপেক্ষার অভিযোগে অভিযুক্ত করতেই পারি৷ এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা ই হবে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও ফিলিস্তিনি জনগনের কুরবানির প্রতি আদল ও ইনসাফ৷

০৭ ই অক্টোবরের আল আকসা তুফানের পর ফিলিস্তিনের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলবার দরকার ছিল। হামাস নানা সময়ে নানা মিলিশিয়া গ্রুপকে অস্ত্র সরবাহ করেছে৷ তন্মধ্যে ২০২১ এ পিএফএলপির কথা উল্লেখযোগ্য। ইউরোপীয় বা অ-ইউরোপীয় মার্ক্সিস্টরা বারংবার ইসলামপন্থা বিরোধী বয়ান হাজির করে তখন বলে জাতীয় ঐক্যের ধার হামাস ধারে না৷ অথচ এই নির্বিচারবাদী মার্ক্সিস্টদের রোমান্টিক পিএলও, মাহমুদ আব্বাস ও  তার সরকার ইসরাইল এবং তার ইউরোপীয় মিত্রদের নগ্ন গোলামি করেছে। পশ্চিম তীরের জনগন যেখানে গাযায় ইসরাইলের গনহত্যায় প্রতিবাদ করছে তখন মার্ক্সিস্টদের রোমান্টিক পিএলও প্রস্তাব করছে তারা গাযার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত৷ ইসলামপন্থা বিয়োজনের মতাদর্শিক রাজনীতি করেই এই মার্ক্সিস্টরা শান্ত না, জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে গিয়ে গাদ্দারিতেও বেশ পটু। গাযা হতে ঢাকায়  ইসলামপন্থা বিয়োজনের মতাদর্শিক রাজনীতি ও জাতীয় ঐক্যের প্রত্যাখ্যানের রাজনীতি দিনের আলোর ন্যায় স্পষ্ট। অথচ, বলশেভিকরা জারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রাশান মুসলিমদের সাথে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলেছিল। এছাড়া  রাশান মুসলিমদের  রাজনৈতিকতাকে রিকগনাইজ করতে সোভিয়েত কেন্দ্রীয় আইনের পাশাপাশি শারিয়া আইন চালু করেছিল। এটার মেয়াদকাল হয়ত অল্প ছিল৷ কিন্তু রাজনৈতিক গঠন বিশেষত জাতীয় ঐক্যের মতোন দশায় এ থেকে শিক্ষা নেবার সুযোগ ছিল মার্ক্সিস্টদের৷ মার্ক্সিস্টদের  প্রত্যাখ্যানের রাজনীতি কিভাবে জাতীয় সার্বভৌমত্ব এর জন্য হুমকি বয়ে আনে তার আশঙ্কা আজ না হয় থাকুক। আশঙ্কা এখনো পুরো শঙ্কায় পরিনত হয়নি। কিন্তু অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ হয়?   

উৎসর্গ :  গাযায় শহিদ হওয়া সকল মা - বাবা -ভাই বোন - শিশু - মুজাহিদীনদের শানে দরুদ ও ফাতেহা৷ বিশেষত স্মরণ করতে চাই, গাযার সেই শিশুকে যে নিজের খেলনা উইল করেছিল৷ এই উইল ফিলিস্তিনে  ইসরাইলের ঔপনিবেশিক - দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে  জেহাদ-প্রতিরোধ-আজাদীর উইল৷

 

দোহাই

[1] Abu-amr, ziad (1994). Islamic Fundamentalism in the West Bank and Gaza. Indiana University Press.

[2] willi, Victor J. (2021). The Fourth Ordeal. Cambridge University Press.

[3] Ayyash, Abdelrahman (2023). Broken Bonds. The Century Foundation

[4] Maliach, Asaf: "Abdullah Azzam, al-Qaeda, and Hamas: Concepts of Jihad and Istishhad" (Military and Strategic Affairs, Volume 2, No. 2, October 2010)

[5]  Mbembe, Achille, Necropolitics

[6] Thobani, Shunera. The exaltation of Israel, the power of Palestinian Resistance, Milestones : Commentary on the Islamic World , War on Gaza series - 2nd article .

[7] Amin, Samir. Political Islam in the service of Imperialism, Monthly Review, 2007

[8]  khan, Tariq Amin. Analyzing Political Islam: A Critique of Traditional Historical Materialist Analytic. Monthly Review, 2009

[9]Baseer, Mullah Saaleh. The Metaphysics of Palestine, Travelling Tradition

[10] El- Sharif, Farah. The Saint and the Sword: How Sufi Scholars of the Nineteenth Century Resisted Colonialism and State Repression, Maydan, 2023

[11] El Amrani, Abdelaziz. Anticolonial Resistance in Morocco, Critical Muslim Studies. 

[12] The Rockets that Explode History,  Editorial Collective, Milestones Commentary on the Islamic World, 2021

[13] Abdulhaq, Raja. Distorting Hamas's Origins : A Response  to Mehdi Hasan, Milestones Commentary on the Islamic World, 2018.

[14] Bradley, Clive. Why isn’t Hamas like the Algerian FLN?, Worker’s Liberty, 24 October,  2023

[15] হুদা, তরিকুল। সাম্য-মানবিক মর্যাদা তথা স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের হম্বিতম্বি, গালগপ্পোঃ শাহাবাগী লাশতন্ত্রের খতিয়ান , খুবাইব মাহমুদ সম্পাদিত, চিরায়ত শাপলানামা, ২০২৩

[16] মূল বাসির, মোল্লা সালেহ। অনুবাদ : নাদিউজ্জামান রিজভী, ত্বোহা আবদূর রহমানের চোখে ফিলিস্তিন, আহমাদ সাব্বির সম্পাদিত যোগাযোগ,  ফিলিস্তিন : ইতিহাস, সংগ্রাম, সাহিত্য, ক্রোড়পত্র -০১, ২০২৩

[17] হুদা, তরিকুল। সামির আমিনের চোখে ইসলামপন্থা। জগলুল আসাদ সম্পাদিত চিন্তাযান, ২য় সংখ্যা, ২০১৯

[18]  ইসলামপন্থা তথা রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে মাহমুদ মামদানির উক্তিটি " আধুনিক রাজনৈতিক ইসলাম উপনিবেশবাদের প্রতিরোধ হিসাবে বিকশিত হয়েছিল। উপনিবেশবাদ ভেতর-বাহিরের উভয় সংকট জাহির করে৷ " ইতিহাসযান থেকে নেওয়া হয়েছে৷

[19] " এটা একইসাথে তাওহীদের ঘোষণা; খোদা আর তাঁর বিধানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের ঘোষণা। এটা খোদ মুসলমানিত্বের ঘোষণা। কোন আন্দোলনকে জালিম-মজলুম এই বাইনারিতে দিয়ে আটকে ফেলার দীর্ঘমেয়াদী একটা সমস্যা হচ্ছে সেই আন্দোলনের অন্টোলজিক্যাল ও মোরাল লেজিটিম্যাসিকে দুর্বল করে দেয়া। " অংশটুকু প্রাবন্ধিক মাহমুদ নাইমের ফেসবুক পোস্ট এর খণ্ডাংশ।

[20] "আমরা ইহুদিদেরকে ঘৃণা করি না এবং তাদের বিরুদ্ধে এজন্য লড়াই করি না যে তারা ইহুদি। আমরা সকল ধর্মের লোকদের প্রতি সুহৃদ। আমার একজন মুসলিম ভাই যদি আমার বাড়ি কেড়ে নেয় এবং আমাকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে তাহলে আমি তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। যখন একজন ইহুদি আমার বাড়ি কেড়ে নেয় ও বিতাড়িত করে আমি তাকেও প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবো। আমি আমেরিকা, বৃটেন বা অন্য কোন দেশের সাথে যুদ্ধ করতে চাই না। আমি সকল মানুষকেই ভালোবাসি এবং সকলের কল্যাণ কামনা করি। একইভাবে আমি ইহুদিদেরও কল্যাণ চাই। ইহুদিরা সবসময়ই আমাদের সাথে বসবাস করেছে এবং আমরা তাদেরকে কখনোই আক্রমণ করিনি। আমরা কখনোই তাদের সাথে খারাপ আচরণ করিনি। তারা আমাদের প্রশাসনের উচ্চপদগুলোতে কাজ করেছে। কিন্তু তারা যখন আমাদের বাড়ি দখল করেছে, আমাদেরকে বিতাড়িত করেছে তখনই আমরা প্রতিহত করেছি।"

- শাইখ আহমেদ ইয়াসিন

উপনিবেশ - দখলদারিত্ব বিরোধী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা